২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নাবিকরা, পরিবারে শঙ্কা

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা গেল ২৪ ঘণ্টায় পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। ভারতীয় নৌবাহিনী অভিযান চালিয়ে ছিনতাই হওয়া মাল্টার পতাকাবাহী একটি জাহাজ উদ্ধার এবং ওই জাহাজে থাকা ৩৫ জন সোমালি জলদস্যুকে গ্রেফতার করার পর আব্দুল্লাহর নাবিকদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। না হয় প্রতিদিন কোনো না কোনো নাবিক পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্যাটেলাইটের সাহায্যে বা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করতেন। এ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে নাবিক পরিবারে। জিম্মি চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান ও অয়েলার শামসুদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

যদিও জাহাজের মালিকপক্ষ বলছে, রোববারও জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। নাবিকরা সবাই ভালো আছেন। তাদের উদ্ধারে নানামুখী প্রচেষ্টা চলছে।
এদিকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সোমালিয়ার বন্দর ও সমুদ্রপথবিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ ইয়াসিন সালাহ বলেছেন, সোমালি জলদস্যুদের কাছ থেকে মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েন উদ্ধারের পর বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধার অভিযানের পরিকল্পনা করছে ভারতীয় নৌবাহিনী।

এ প্রসঙ্গে কবির গ্রুপের (কেএসআরএম) অধীন এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিম বলেন, জাহাজের মালিকপক্ষ বা সরকারের অনুমতি ছাড়া ভারতীয় নৌবাহিনী এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে কীভাবে অভিযান চালাবে। তাছাড়া মাল্টার পতাকাবাহী যে জাহাজ উদ্ধার করা হয়েছে সেই অভিযানে জিম্মি অনেক নাবিকও আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের নাবিকদের কোনো ধরনের ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না। জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে আমাদের রোববারও যোগাযোগ হয়েছে। তারা ভালো আছেন। নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে আমাদের নানামুখী প্রচেষ্টা চলছে। সব প্রচেষ্টা বা উদ্যোগের কথা প্রকাশ্যে আনতে চাই না।

রোববার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ৪০ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানে ৩৫ জলদস্যু ও ১৭ ক্রুসহ মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় ভারতীয় নৌ সেনা ও কমান্ডোরা।

সূত্র জানায়, মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজটি সোমালিয়ার যে জলদুস্যরা জিম্মি করেছিল তাদের অপর একটি দল বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করেছে। জিম্মিকারীদের মধ্যে পরস্পরের যোগাযোগ রয়েছে। এ কারণে এমভি আবদুল্লাহয় যাতে ভারতীয় নৌবাহিনী বা অন্য কোনো বাহিনী অভিযান চালাতে না পারে, কোনো তথ্য পাচার না হয় সেজন্য এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে জলদস্যুরা। কোনো পর্যবেক্ষক বা উদ্ধারকারী জাহাজ যাতে কাছে ঘেঁষতে না পারে সেজন্য ক্যাপ্টেনকে জিম্মি করে নানা নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের ছোট ভাই আসিফ নুর রোববার সন্ধ্যায় বলেন, রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় তার ভাই ফোন করেননি। জাহাজ দস্যুদের কবলে পড়ার পর থেকে প্রতিদিন একবার হলেও ফোন করতেন। এত সময় ধরে কোনো ফোন না করায় তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এ কারণে তারা জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবরাখবর নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

জাহাজের অয়েলার আনোয়ারার বাসিন্দা মোহাম্মদ শামসুদ্দিন সর্বশেষ শনিবার বেলা ৩টায় ফোন করে জাহাজে নতুন জলদস্যু ওঠার কথা জানিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু এরপর রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত আর কোনো ফোন করেননি। এ কারণে শামসুদ্দিনের পরিবারও উৎকণ্ঠায় আছে।

এদিকে যত দিন যাচ্ছে ততই দাহ্য পদার্থবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার টন কয়লা কুলিং করতে না পারায় যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানায় নাবিকদের সূত্র। কারণ জাহাজে জিম্মি নাবিকদের কোনো কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ