স্ত্রীর বিষপানের খবর পেয়ে স্বামীর গলায় ফাঁস

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় স্ত্রীর বিষপানের খবর পেয়ে স্বামীও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তারা পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। মেয়ের পরিবার কিছুতেই বিয়ে মেনে না নেওয়ায় তারা আত্মহত্যা করেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

সোমবার রাতে উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়নের দামগারা কারিগরপাড়া ও পাশের মাসিমপুর চালুঞ্জা তালুকদারপাড়ায় নিজ নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, প্রেমিককে ফোনে রেখে প্রেমিকা বিষপান করেন। বিষয়টি টের পেয়ে প্রেমিক গলায় ফাঁস দেন। গভীর রাতে পুলিশ দুটি লাশ উদ্ধার করেছে।

নিহতরা হলেন— শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়নের দামগারা কারিগরপাড়ার মৃত আবদুল জলিলের ছেলে দিনমজুর সবুজ মিয়া (২১) এবং একই ইউনিয়নের মাসিমপুর চালুঞ্জা তালুকদারপাড়ার আবদুর রাজ্জাকের মেয়ে মার্জিয়া জান্নাত (১৯)। মার্জিয়া ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও স্বজনরা জানান, পাশাপাশি দুটি গ্রামের দিনমজুর সবুজ মিয়া ও কলেজছাত্রী মার্জিয়া জান্নাতের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সবুজ মাঝিহট্ট সৈয়দ মিনা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। প্রায় ছয় মাস আগে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। জান্নাতের প্রভাবশালী পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি; তারা মেয়েকে ধরে এনে সবুজ মিয়াকে তালাক দিতে বাধ্য করেন। এর পরও তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক অব্যাহত ছিল।  দুদিন আগে মার্জিয়া জান্নাতকে জোর করে এক প্রবাসীর সঙ্গে টেলিফোনে বিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে সোমবার জান্নাত বাড়ি থেকে পালিয়ে সবুজের কাছে যান। পরে তারা গোপনে কাজীর কাছে গিয়ে বিয়ে করেন। এর পর সবুজ জান্নাতকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। সবুজের দরিদ্র পরিবার বিয়ে মেনে নেয়। প্রভাবশালী জোতদার পরিবার জানতে পারে তাদের মেয়ে আবারও সবুজের সঙ্গে পালিয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যার দিকে তারা সবুজের বাড়িতে গিয়ে জোরপূর্বক জান্নাতকে নিয়ে আসে। কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও রাত ৯টার দিকে জান্নাত তার প্রেমিক স্বামী সবুজকে ফোন দেন। ঘরে ফোনে কথা বলার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় ফোন রেখে জান্নাত বিষপান করে মারা যান।

অপরপ্রান্ত থেকে সবুজ বুঝতে পারেন তার ভালোবাসার মানুষ আর নেই। তখন তিনি নিজ ঘরে সিলিংফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে শিবগঞ্জ থানার এসআই ইমরান হোসেন প্রেমিক সবুজ মিয়ার ও এসআই নাসির উদ্দিন প্রেমিকা মার্জিয়া জান্নাতের লাশ উদ্ধার করেন।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওসি দীপক কুমার দাস জানান, সবুজ ও জান্নাত এর আগেও পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। কয়েক দিন আগে মেয়েকে পরিবার থেকে এক প্রবাসীর সঙ্গে ফোনে বিয়ে দেওয়া হয়। এর পরও তারা আবারও পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। পরিবার তাদের বিয়ে মেনে নেবে না ভেবে হয়তো তারা দুজন আত্মহত্যা করেছেন।

মাঝিহট্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসকেন্দার আলী শাহানা জানান, ওই তরুণ ও তরুণী বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। তালাকের পর পরিবার থেকে দুদিন আগে এক প্রবাসীর সঙ্গে ওই মেয়ের টেলিফোনে বিয়ে দেওয়া হয়। তবে সোমবার ওই প্রেমিক-প্রেমিকা আবারও পালিয়ে বিয়ে করেন।

তিনি বলেন, মেয়ের পরিবারের হঠকারিতার কারণে দুটি প্রাণ শেষ হয়ে গেল। দুটি মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। কোনো পক্ষ আইনের আশ্রয় নিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on linkedin
LinkedIn
Share on print
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ