সাকিবের ‘টাইমড আউট’ বিতর্ক, যা বললেন পাকিস্তানের কিংবদন্তিরা

ক্রিকেটের নিয়মে একজন ব্যাটসম্যানকে ১১ ভাবে আউট করা যায়। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে ‘টাইমড আউট’ গতকালই প্রথম দেখেছে বিশ্ব।

আউটটি আইনসিদ্ধ হলেও এর আগে কখনো কোনো ব্যাটসম্যানকে এভাবে আউট হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়নি। সুযোগ পেয়ে কাল সেটা কাজে লাগাতে পিছপা হননি বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাঠে নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে এসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খেলার জন্য প্রস্তুত না হওয়ায় আউট হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় শ্রীলংকার ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে।

ম্যাথুসের ‘টাইমড আউট’ ঘিরে মাঠে যেমন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, মাঠের বাইরেও তৈরি হয় বিতর্ক। এমনকি কাল শ্রীলংকার ইনিংস শেষে চতুর্থ আম্পায়ার আদ্রিয়ান হোল্ডস্টকরে ব্যাখ্যা দিলেও পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম, মিসবাহ উল হক, শোয়েব মালিক, আজহার আলী এটাকে ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থী মনে করছেন। তবে মঈন খান সাকিবের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

পাকিস্তানের ক্রীড়া বিষয়ক টেলিভিশন চ্যানেল ‘এ স্পোর্টস’-এর প্যাভিলিয়ন অনুষ্ঠানে অন্য দিনগুলোর মতো সোমবার বিশ্লেষক হিসেবে এসেছিল আকরাম, মিসবাহ, মালিক ও মঈন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ফখর-ই-আলম ম্যাথুসের ‘টাইমড আউট’ নিয়ে সবার মত জানতে চাইলে শুরুতে আকরাম বলেন, ‘এ নিয়ে হয়তো আমাদের বিতর্ক চলতেই থাকবে। (টাইমড আউটের) সময় পার হয়ে গেছে কি যায়নি, এর সঠিক উত্তরও হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো সাকিবের এই আবেদন কি তুলে নেওয়া উচিত ছিল নাকি সাকিবের আবেদন করাই ঠিক হয়নি?’

জবাবে শোয়েব মালিক বলেন, ‘প্রত্যেক অধিনায়কেরই নিজস্ব মত থাকতে পারে। যদি আমি অধিনায়ক হতাম, কখনোই আবেদন করতাম না।’ একই মত আকরামেরও, ‘আমার মাথায় এ ধরনের চিন্তা আসত না।’

আকরাম–মালিকের কথায় সায় দিয়ে মিসবাহ বলেন, ‘আমিও তাই মনে করি। যদি এমন হতো ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করছে, যেটার কারণে প্রতিপক্ষ দলের (বাংলাদেশের) কোনো ক্ষতি হচ্ছে, ম্যাচের ফলের ওপর প্রভাব পড়ছে অথবা আপনাকে জরিমানা করা হচ্ছে; তাহলে না হয় মানা যেত। কিন্তু এ ধরনের কোনো কিছুই হয়নি। আপনার উচিত ব্যাটসম্যানকে যথাযথ নিয়মে আউট করা। ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড কারও দেরি হতেই পারে। এই ঘটনার পর ক্রিকেটীয় চেতনা বলে কিছু থাকল?’

এর পর শোয়েব মালিক বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষতি হলে বড়জোর একটাই হতে পারত। ৪০ ওভারের পর একজন ফিল্ডারকে বৃত্তের ভেতর রাখতে হতো। কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতিতে আম্পায়াররা সময় থমকে দেন (নষ্ট হওয়া সময় ছাড় দেন)।’

সঞ্চালক ফখর-ই-আলম শেষ প্রশ্নটি করেন মঈন খানকে, ‘আপনি হলে কি আবেদন করতেন?’ জবাবে পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসলে মাঠেই (তাৎক্ষণিকভাবে) নিতে হয়। আইন অনুযায়ী ওর (সাকিবের) সিদ্ধান্ত সঠিক। সেখানে যদি জয়-পরাজয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে এটা ভালো সিদ্ধান্ত। যেটি সে নিজেও বলেছে। ওর জায়গায় আমি থাকলে হয়তো আমিও টাইমড আউটের আবেদন করতাম।’

পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আজহার আলী আবার আকরাম, মিসবাহ, মালিকদের সুরে সুর মিলিয়েছেন। টুইটারে আজহার লিখেছেন, ‘আমি নিশ্চিত সাকিবও তার ক্যারিয়ারে কয়েকবার ‘টাইমড আউট’ হয়ে যেত যদি কেউ আবেদন করত। আমাদের অনেকের সঙ্গেই এটা হতে পারত। সাকিবের ঘটনা আরও অনেক আউট নিয়ে আলোচনার সুযোগ করে দিতে পারে, যেগুলো খেলাটির আইনে আছে। বর্তমান খেলোয়াড়দের প্রতি আমার পরামর্শ ব্যাট করার সময় বল স্পর্শ করবে না এবং বলটি প্রতিপক্ষ দলকে দিয়ে দেবে। মনে করতে হবে ওরা পরের বলটি করতে যাচ্ছে। আমার কাছে এটা স্পোর্টসম্যানশিপের জন্য আরেকটি দুঃখজনক দিন।’

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on linkedin
LinkedIn
Share on print
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ