রাশিয়ার তেলে কোন দেশ কতটুকু নির্ভর

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকেই বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা তেলের দাম আরো বাড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে সারাবিশ্বে প্রতিদিন নয় কোটি ৯৭ লাখ ব্যারেল তেল ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই এর পাঁচ ভাগের এক ভাগ তথা দুই কোটি চার লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল তেল ব্যবহৃত হয়েছে। এর পরে দৈনিক এক কোটি ৩০ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে চীন ও ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল দৈনিক ব্যবহার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত।

বিশ্বের বর্তমান মোট ১.৫৫ ট্রিলিয়ন ব্যারেল জ্বালানি তেলের মজুদের অর্ধেকেই রয়েছে ভেনেজুয়েলা, সৌদি আরব ও ইরান এই তিন দেশের কাছে।

ভেনেজুয়েলায় মজুদ রয়েছে ৩০ হাজার ৩৮০ কোটি ব্যারেল, সৌদি আরবে মজুদ রয়েছে ২৫ হাজার ৮৬০ কোটি ও ইরানে ২০ হাজার ৮৬০ কোটি ব্যারেল জ্বালানি তেল মজুদ রয়েছে।

সর্বাধিক জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশ

১৯৬০ সালে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বের জ্বালানি তেল রফতানিকারী দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিস। সংক্ষেপে ওপেক নামে পরিচিত এই সংগঠনটির মোট ১৩ সদস্য রয়েছে, যারা বিশ্বের সন্ধান পাওয়া মোট জ্বালানি তেলের ভাণ্ডারের ৮০ শতাংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে।

সংগঠনটির বাইরে থাকা বৃহত্তম জ্বালানি তেলের ভাণ্ডার থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, ওপেক সদস্য দেশগুলো বিশ্বের ক্রুড তেলের ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে এবং পেট্রোলিয়ামের প্রায় ৬০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজার তাদের হাতেই রয়েছে।

২০২০ সালে দৈনিক উৎপাদনের হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ দশ তেল উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র (এক কোটি ৮৬ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল), সৌদি আরব (এক কোটি আট লাখ ১০ হাজার ব্যারেল), রাশিয়া (এক কোটি পাঁচ লাখ ব্যারেল), কানাডা (৫২ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল), চীন (৪৮ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল), ইরাক (৪১ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল), সংযুক্ত আরব আমিরাত (৩৭ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল), ব্রাজিল (৩৭ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল), ইরান (৩০ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল) ও কুয়েত (২৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল)।

রাশিয়ার তেলের ওপর নির্ভরশীল দেশ

২০১৯ সালে বিশ্বের সর্বাধিক ক্রুড তেল রফতারিকারক দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব (১৮৫ বিলিয়ন ডলার), রাশিয়া (১২৩ বিলিয়ন ডলার), ইরাক (৭৩.৮ বিলিয়ন ডলার), কানাডা (৬৭.৮ বিলিয়ন ডলার) ও যুক্তরাষ্ট্র (৬১.৯ বিলিয়ন ডলার)।

রাশিয়ার মোট তেল রফতানির চার ভাগের এক ভাগই (২৭ শতাংশ) চীনে করা হয়েছে, যার মূল্য ৩৪ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য এটি চীনের মোট জ্বালানি চাহিদার মাত্র ১৬ শতাংশ পূরণ করেছে।

২০১৯ সালে অন্তত ৪৮টি দেশ রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করে। জ্বালানি তেলের জন্য রাশিয়ার ওপর প্রায় শতভাগ নির্ভরশীল দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বেলারুশ, কিউবা, কুরাশাও, কাজাখস্তান ও লাটভিয়া।

নিজের গ্রাফে রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন দেশের জ্বালানি নির্ভরশীলতার তথ্য প্রকাশ করা হলো।

রাশিয়ার তেলের ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন দেশ- ছবি : আলজাজিরা

 

রাশিয়ার তেলে নিষেধাজ্ঞা হলে যা হবে

ইউক্রেনের ওপর রুশ আগ্রাসনের পরপরই বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। চলমান এই জ্বালানির লড়াইয়ের ফলে ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের পর নতুন করে তেলের দাম অবিশ্বাস্য মাত্রায় বাড়িয়েছে।

গত ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন রাশিয়ার পেট্রোলিয়াম আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আমেরিকান ফুয়েল অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারারস ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র গড়ে দৈনিক দুই লাখ নয় হাজার ব্যারেল ক্রুড তেল এবং পাঁচ লাখ ব্যারেল অন্য পেট্রোলিয়াম পণ্য রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে।

এটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রুড তেল আমদানির তিন শতাংশ ও মার্কিন তেল শোধনাগারে প্রক্রিয়াজাত হওয়া তেলের এক শতাংশ। রাশিয়ার মোট রফতানির এটি তিন শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি রুশ তেলে নিষেধাজ্ঞা দেয় তা সত্ত্বেও তারা পরিস্থিতি চালিয়ে নিতে পারবে।

তবে রাশিয়ার জ্বালানি খাতে নিষেধাজ্ঞা সারাবিশ্বেই জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ার মাধ্যমে অনুভূত হবে।

সূত্র : আলজাজিরা

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on linkedin
LinkedIn
Share on print
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ