যে ধন্যবাদে মিশে আছে গর্ব, কৃতজ্ঞতা, ঐশ্বর্য

বাংলাদেশ ক্রিকেটের এখনো সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। এই সত্য এখনো কেউ মানুক আর না-ই মানুক, দেশের ক্রিকেট ঘুরে ফিরে এই দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

বিশেষ করে মাশরাফির ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর ও তামিমের সাম্প্রতিককালের দলগত পারফরম্যান্সে তার সঙ্গে সাকিবের জুটিই আবার লাইমলাইটে। সেটা বিজ্ঞাপনের বাজারে হোক আর খেলার মাঠে।

সাকিব বরাবরই বাংলাদেশের সুপারস্টার। লোক মুখে বলা, যে ম্যাচে সাকিব শতভাগ দেয় সেই ম্যাচটা সাকিবেরই হয়ে যায়। এটা অবশ্য সাকিব নিজে বিশ্বাস করতে চান না। তার কাছে, প্রতিটি ম্যাচই সমান। শতভাগ উজার করে দিতেই মাঠে নামেন। ঠিক এমন কথা তামিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আছে, ‘তামিমের ব্যাট হাসলেই হাসে বাংলাদেশ।’

গুঞ্জন ছড়ায়, তামিম ও সাকিবের বর্তমান সম্পর্ক ভালো না। দুজন দুজনের সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া কথাও বলেন না। প্রয়োজন হলেও বলতে চান না! ইগোর সমস্যা, নানা পারিপার্শ্বিক সমস্যা নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয়। কিন্তু বিষয়টা কি আসলেও সত্যি? তামিম করোনাকালে এক ফেসবুক লাইভ করেছিলেন। সেখানে জাতীয় দলের প্রায় সব ক্রিকেটার আসলেও অনুপস্থিত ছিলেন সাকিব। সময় বের করতে না পারায় ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকায় আসা হয়নি। এ কারণে নিন্দুকেরা তাদের সম্পর্ককে ‘সাপে নেউলে’ বলতেও দ্বিধা করেননি। কিন্তু আসলেও কি এসব সত্যি?

তামিম সাকিবের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখা দিয়েছিলেন এভাবে, ‘আমাদের মধ্যে দূরত্ব থাকার তো কোনো কথাই আসে না। আমাদের সম্পর্ক আমাদের সম্পর্কের জায়গায় আছে। আমরা একটা পাবলিক ফিগার বলে কি মানুষ যা ইচ্ছা তাই মনে করে নিতে পারে? অনেকে অনেক কিছু লিখে দিতে পারে?’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের চেয়ে সাকিব ছয় মাসে এগিয়ে। সাকিবের অভিষেক ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট, তামিমের ২০০৭-এর ৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর তারা দ্রুত বাংলাদেশের পোস্টারবয় হয়ে উঠেন পারফরম্যান্স দিয়ে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে একসঙ্গে থাকায় তাদের বোঝাপড়া দারুণ হয়। সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে- সাকিব-তামিম খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

জাতীয় দলের অনুশীলনে দুজন একসঙ্গে। বিসিবির সঙ্গে বৈঠকে দুজন একসঙ্গে। সাকিব অধিনায়ক, তামিম তার ডেপুটি; ফলে একসঙ্গে থাকাটাই তো স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে যেন মুদ্রার এপিঠ–ওপিঠ। কিন্তু তারা দুজন কি আসলেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন নাকি ড্রেসিংরুমের কাছের সতীর্থ ছিলেন!

এ নিয়ে তামিম এক গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমরা কখনোই অতি মাখামাখি কিছু করিনি যে মানুষ বলছে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমরা সব সময়ই খুব কাছের ছিলাম। নিজেদের খেলার বোঝাপড়াটা ভালো। মিডিয়া সৃষ্টি করেছে আমরা ভালো বন্ধু। এখন আবার বলছে খারাপ কিছু।’

তবে লাল সবুজের জার্সি পরে মাঠে নামলে এগুলো কি মাথায় থাকে? তামিম এখন অধিনায়ক। সাকিব স্রেফ একজন খেলোয়াড় মাত্র। অথচ সাকিবকেই কঠিন সময়ে সবচেয়ে বেশি দরকার তামিমের। এখন এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের কথাই আসবে। সিরিজ জয়ের প্রথম মিশনে সাকিবই ছিলেন দলের নায়ক। শেষ ম্যাচে তার খেলার কথা ছিল না। দেশে গোটা পরিবার অসুস্থ। বিশেষ করে মা, সন্তান হাসপাতালে ভর্তি। সাকিব দেশের বিমানের টিকিট কেটে ফেলার পরও তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে থেকে যান।

বাঁহাতি অলরাউন্ডার সিরিজ জয়ের তাড়নায় এতটাই বুদ হয়ে ছিলেন যে, পরিবারের কঠিন সময়ে পাশে থাকার ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তার এই ত্যাগে তামিম খুঁজে পাচ্ছেন গর্ব। দলের প্রতি তার টান। এজন্য বড় মঞ্চে সতীর্থকে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেননি অধিনায়ক। যেই ধন্যবাদে মিশে ছিল গর্ব, কৃতজ্ঞতা, ঐশ্বর্য।

তামিম বলেছেন, ‘সাকিবের এখানে আসা এবং খেলা, এটা অনেক বড় ব্যাপার। বিশেষ করে তার দুই সন্তান, মা ও শাশুড়ি সবাই হাসপাতালে, এরপরও সে এখানে খেলেছে। এতেই সে তার চরিত্র বুঝিয়েছে যে, সে এখানে সিরিজ জিততে চায়। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই, অনেক ধন্যবাদ। সে আমাদের জন্য দুর্দান্ত ছিল।’

সাকিব-তামিমের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব এবং দুজনের মধ্যে দেয়াল খোঁজা- দুটোই কল্পনার বাড়াবাড়ি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দুজন দুজনের জন্য দেখিয়েছেন সম্মান, খুঁজে পেয়েছেন গর্ব। তাইতো ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর ড্রেসিংরুমে চার সিনিয়রের ফ্রেমবন্দী ছবিটায় তারা দুজন ছিলেন পাশাপাশি, ড্রেসিংরুমে আমরা করব জয় গানটাতেও তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন। সাকিবের ব্যাট থেকে আসা জয়সূচক বাউন্ডারির পর ২২ গজে দুজনকে জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপড়ে দেওয়ার ছবিটাই বলে দেয়, তারা ‘রিয়েল পার্টনার’। তাদের বন্ধুত্বটা সেখানেই।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on linkedin
LinkedIn
Share on print
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ