রাশিয়া যেকোনো সময়ই ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালাতে পারে বলে সর্তকর্তা করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সাথে সাথে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেনে অবস্থান করা মার্কিন নাগরিকদের দেশটি ছেড়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভ্যান রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতর হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সতর্কতা ও আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জ্যাক সুলিভ্যান বলেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবেই ভবিষ্যতের পূর্বাভাস জানাতে পারি না। আমরা জানি না ঠিক কী হবে তবে বর্তমানে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে এবং হুমকি বর্তমানে অবশ্যম্ভাবী।’
জ্যাক সুলিভ্যান জানান, হাতে পাওয়া স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র জানতে পেরেছে ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সামরিক শক্তি সীমান্তে জড়ো করেছে রাশিয়া।
বেইজিংয়ে চলমান শীতকালীন অলিম্পিক গেমস শেষ হওয়ার আগেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বিমান হামলার মাধ্যমে রুশ বাহিনী আগ্রাসন শুরু করতে পারে বলে জানান তিনি।
জ্যাক সুলিভ্যান বলেন, ‘আমরা এখনোই দিন বা সময় নির্ধারণ করতে পারছি না। কিন্তু এটিই খুবই স্পষ্ট সম্ভাবনা।’
সংবাদ সম্মেলনে সুলিভ্যান জানান, মার্কিন প্রশাসন এখনো জানে না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হামলার জন্য চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না। তবে আগ্রাসন হলে তাকে বৈধ করার জন্য ঘটনাপ্রবাহ রাশিয়া সন্ধান করছেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি না এখনোই কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে বিষয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। আমরা যা বলতে চাচ্ছি, মাঠ পর্যায়ে আমরা যা দেখছি তাতে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।’
তবে মার্কিন প্রশাসন এখনো বিশ্বাস করে না পুতিন আগ্রাসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র এই সংকটের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে জানান মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে একইসাথে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেনে থাকা মার্কিন নাগরিকদের দেশটি ছেড়ে আসার আহ্বান জানান জ্যাক সুলিভ্যান। সাথে সাথে দেশটি ত্যাগ করার জন্য পরিবহনের প্রয়োজনে কিয়েভে থাকা মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করার জন্য বলেন তিনি।
সুলিভ্যান বলেন, ‘বর্তমানে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে এবং (হামলার) হুমকি এমন অবশ্যম্ভাবী যে বর্তমান পরিস্থিতির দাবি হচ্ছে (ইউক্রেন) ছেড়ে আসা।’
পরে যদি যুদ্ধ শুরু হয়, তবে আটকে পড়া মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারে ঝুঁকি নিয়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হবে না বলে জানান তিনি।
জ্যাক সুলিভ্যান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আমাদের উর্দিধারী পুরুষ ও নারীদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে একটি যুদ্ধ চলমান এলাকা থেকে ওই লোকদের উদ্ধারে পাঠাবেন না যারা এখনোই স্থান ত্যাগ করতে পারেন কিন্তু তারা করেননি। সুতরাং আমরা জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেয়ার।’
এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার আশঙ্কায় আরো সাত দেশ নিজ নিজ নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। ওই দেশগুলো হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন, লাটভিয়া, নরওয়ে, জাপান ও এস্তোনিয়া।
এর আগে বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে মার্কিন নাগরিকদের শিগগিরই ইউক্রেন ছেড়ে আসার জন্য আহ্বান জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনে রুশপন্থী সরকারের পতনের পর রাশিয়া দেশটিতে আগ্রাসন চালিয়ে ক্রিমিয়া অঞ্চলটি দখল করে নেয়। পাশাপাশি মস্কোর পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ব ইউক্রেনে বিপুল অঞ্চল দখল করে নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
ওই সংঘর্ষ বন্ধে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্থতায় ২০১৫ সালে বেলারুশের মিনস্কে ইউক্রেন ও রাশিয়া অস্ত্রবিরতি চুক্তি করে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের পর দুই দেশের মধ্যে আবার সম্পর্কে উত্তেজনা শুরু হয়।
ইউক্রেনের অভিযোগ, দেশটির পূর্বাঞ্চলে কিয়েভের বিরুদ্ধে লড়াইরত রুশপন্থী বিদ্রোহী যোদ্ধাদের সহায়তার নামে ইউক্রেনে আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মস্কো।
অপরদিকে ইউক্রেনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। দেশটি বলছে, সামরিক বাহিনীর মহড়ার অংশ হিসেবে ওই সৈন্য সমাবেশ করা হয়েছে।
একইসাথে ইউক্রেনের পূর্বে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের যোদ্ধাদের নিপীড়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে রাশিয়া।
সৈন্য সমাবেশের জেরে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্তেজনা চলছে। উত্তেজনা প্রশমনে বিভিন্ন পন্থায় কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্র : আলজাজিরা ও বিবিসি