“বর্তমান প্রযুক্তিগুলোকে শুধু উন্নত করলেই যাদুর মতো মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা পাওয়া যাবে—এই ভাবনাটা ভুল।” — এমনটাই বলছেন গবেষকরা।
বিশ্বে প্রথমবারের মতো একটি “ডিজিটাল স্নায়ুতন্ত্র” তৈরি করার দাবি করেছে সুইডেনের একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টুইসেল’। তাদের মতে, এই প্রযুক্তি রোবটকে বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখার সুযোগ দেবে—একেবারে মানুষের মতো।
এই সিস্টেম ব্যবহার করে তারা তৈরি করেছে ‘লুনা’ নামের একটি রোবট কুকুর। মানুষের মতো আচরণ অনুকরণ করে এক ধরনের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এটি বানানো হয়েছে।
ব্রিটিশ পত্রিকা ইন্ডিপেনডেন্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রোবটটি নানা দক্ষতা অর্জন করতে পারে, পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও উন্নত হয়।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রোবটটি কোনো রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজের মতো দাঁড়াতে শিখছে। এটা অনেকটা নবজাতক জিরাফের মতো, যে জন্মের পরপরই দাঁড়াতে শেখে।
ইন্টুইসেল-এর সিইও ভিক্টর লুথম্যান জানান, “আমরা এমন একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছি যা যেকোনো যন্ত্রকে মানুষ বা প্রাণীর মতো শেখাতে পারে। এটি নতুন সমস্যা বুঝতে পারে এবং বাস্তব সময়ের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতেও সমাধান বের করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সফটওয়্যারের জন্য আগে থেকে ট্রেনিং, সিমুলেশন বা লেবেলযুক্ত ডেটা লাগবে না। কারণ আমরা বিশ্বাস করি বুদ্ধিমত্তা কেবল ডেটা গুনে বের করা যায় না, এটা শুরু থেকেই থাকা দরকার।”
লুথম্যানের ভাষায়, এটি শুধু আজকের আর আগামীকালের এআই এর মধ্যে পার্থক্য নয়, বরং এটি ‘মেশিন লার্নিং’ বনাম ‘জীবন্ত বুদ্ধিমত্তা’-র মধ্যকার পার্থক্য। এই সফটওয়্যার সেই বুদ্ধিমত্তাকেই ডিজিটাল রূপ দিয়েছে।
ইন্টুইসেল-এর দাবি, তাদের ডিজিটাল স্নায়ুতন্ত্র প্রযুক্তি এমন রোবট বা এআই সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠবে, যেগুলো শুধুমাত্র বিশাল ডেটাসেট ও পূর্বপ্রশিক্ষিত মডেল ব্যবহার করে চলে।
এই নতুন পদ্ধতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের থেকে শিখে মানুষের মতো চিন্তা করতে পারবে। গবেষকদের মতে, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে এক নতুন যুগের সূচনা করবে।
ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি কোথায় ব্যবহৃত হতে পারে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে লুথম্যানের মতে, ১৯৯০ সালে যেমন ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ কেউ কল্পনা করতে পারেনি, এটাও তেমনই এক প্রযুক্তি।
এই ধরনের ডিজিটাল স্নায়ুতন্ত্র ব্যবহার করে ভবিষ্যতে হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি হতে পারে, যারা ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা, হাসপাতালের কাজ বা এমনকি গাড়ি চালানোও শিখতে পারবে।