বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৯ টাকা বাড়িয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তবে সরকার বলছে দাম এতটা বাড়ানো যাবে না। ৯ টাকা থেকে কমিয়ে দাম নির্ধারণ করতে হবে। বাড়তি দাম কতটা কমবে সেটি নিয়ে সরকার–ব্যবসায়ী উভয়পক্ষের মধ্যে দরকষাকষি চলছে। যা আগামী রোববার আরেক দফা বৈঠকে চূড়ান্ত হতে পারে।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাণিজ্য সচিব মাহাবুবুর রাহমানের সভাপতিত্বে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সাধারণত ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি মেনুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে তৃপক্ষীয় আলোচনার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ ক্ষেত্রে ভোজ্যতেলের দাম কত হওয়া উচিত তা বিশ্লেষণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে কয়েক মাস থেকে দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলে অ্যাসোসিয়েশন। গত ৮ সেপ্টেম্বর অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে দেশের বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন ও পামতেলের দাম ১০ টাকা বাড়ানোর অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
এর প্রেক্ষিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর ট্যারিফ কমিশন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ভোজ্যতেলের স্থানীয় ও বিশ্ববাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রতি লিটারে ১ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে অ্যাসোসিয়েশন সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। সিদ্ধান্ত গ্রহণের না করার পক্ষে তাদের যুক্তি ছিল যে, খোদ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের দেওয়া বিশ্লেষণেই লিটারে অন্তত সয়াবিন তেলের দাম ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তবে ট্যারিফ কমিশনের বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে ত্রুটি থাকতে পারে ধারনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তবে সে সময় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াননি।
এরপর গত ১০ নভেম্বর ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি মেনুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন।
চিঠিতে সংগঠনটি জানায়, আইন অনুযায়ী তাদের সমিতি সময়ে সময়ে ভোজ্যতেলের মূল্য যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গতভাবে হ্রাস, বৃদ্ধি বা পুন:নির্ধারণ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং অক্টোবরের এলসি, এনবন্ড ও এক্স-বন্ড যথাযথভাবে বিবেচনা সাপেক্ষে অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক, স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ রাখার স্বার্থে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ, ২০১১ এর দফা-১২ এর উপদফা-৫ অনুযায়ী ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ২৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হবে।
এক্ষেত্রে সমিতি প্রতি লিটার বোতলজাত তেলে ১০ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা ও পাঁচ লিটারের বোতল ৯৮৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৭৯ ও পামওয়েল ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে। তবে এ বাড়তি দাম অনুমোদন করেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারপরও গত কয়েকদিন থেকে সোয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৯ টাকা বাড়িয়ে দেয় কোম্পানিগুলো।
দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিবালয়ে গত বুধবার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকারকে কিছুই জানানো হয়নি। কোম্পানিগুলো সামগ্রিকভাবে একত্রিত হয়ে দাম বাড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা যে প্রক্রিয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছেন এর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। খুব শিগগিরই এ বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ প্রেক্ষিতে আজ বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেন। এতে ভোজ্যতেলের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী, টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপ-মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ারসহ ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ব্যবসায়ীদের বাড়তি দাম কিছুটা কমাতে বলেছে সরকার। ব্যবসায়ীরাও কমানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। আগামী রোববার আরাক দফার বৈঠকে সেটি চূড়ান্ত হতে পারে।
জানতে চাইলে শফিউল আতাহার তসলিম সমকালকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাম কমাতে বলা হয়েছে। তবে সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যতটুকু না বাড়ালেই নয় সেটুকুই দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই তাদের পক্ষ থেকে দাম কমানোর সুযোগ নেই। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার যে হিসাব করেছে সেটিও বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আগামী রোববার আরেক দফা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানেই বিষয়টি ফয়সালা হবে বলে আশা করছেন তিনি।