বিষ মাখানো মিষ্টি দিয়ে যায় প্রেমিক, দুই শিশুকে খাওয়ায় মা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সহোদর ইয়াছিন (৭) ও মোরসালিনের (৫) মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। নাপা সিরাপ খেয়ে নয়, পরকীয়া প্রেমের জেরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের সেই দুই শিশুকে বিষ মেশানো মিষ্টি খাইয়ে হত্যা করেন মা লিমা বেগম।

একান্তভাবে কাছে পেতে দুই সন্তানকে ছেড়ে আসার জন্য লিমাকে শর্ত দিয়েছিল প্রেমিক শফিউল্লাহ। এজন্য সন্তানদের হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। সে মোতাবেক বিষ মাখানো মিষ্টি দিয়ে যায় প্রেমিক; আর দুই শিশু সন্তানকে খাওয়ায় মা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।

একই সময়ে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে দুই শিশুর মা লিমা বেগম। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আফরিন আহমেদ হ্যাপী তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

এর আগে সকালে লিমাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। লিমা ও শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে শিশুদের বাবা মো. ইসমাইল হোসেন সুজন।

এদিকে শিশুদের জন্য যে ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ আনা হয় সেখান থেকে ৮টি নিয়ে পরীক্ষা করে ওষুধ প্রশাসন। তবে পরীক্ষায় কোনোটাতেই ক্ষতিকারক কিছু পাওয়া যায়নি বলে ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। যে সিরাপ খেয়ে মৃত্যু হয়েছে সেটিও ওষুধ প্রশাসন পরীক্ষা করে দেখছে।
পুলিশ বলছে, ওই দুই শিশুর ভিসেরা রিপোর্টের পাশাপাশি নাপা সিরাপের পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য তারা অপেক্ষা করছেন।

জবানবন্দি দেওয়া মায়ের কথার সঙ্গে ওই রিপোর্টের মিল থাকে কি-না সেটিও যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।

পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, চাল কলে কাজ করা সুবাদে শ্রমিক সর্দার সফিউল্লাহর সঙ্গে লিমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। লিমাকে আর্থিকভাবেও সহায়তা করত সফিউল্লাহ। লিমার স্বামী ইসমাঈল হোসেন চোখে কম দেখেন এবং শারীরিকভাবেও অক্ষম ছিলেন। সেজন্য লিমা তাকে ছেড়ে সফিউল্লাহকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সফিউল্লার শর্ত ছিল দুই সন্তান ইয়াছিন (৭) ও মোরসালিনকে (৫) ছেড়ে আসতে হবে।

পুলিশ সুপার জানান, নিজেকে সন্তানদের থেকে মুক্ত করতে পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে মিলে দুই ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন লিমা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন বাড়িতে এসে বিষ মাখানো পাঁচটি মিষ্টি দিয়ে যান শফিউল্লাহ। এর মধ্যে ইয়াছিনকে তিনটি ও মোরসালিনকে দুটি মিষ্টি খাওয়ানো হয়। ঘটনার সময় শিশুদের বাবা সুজন বাড়িতে ছিলেন না।

মিষ্টি খাওয়ার পরই দুই শিশু অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। পরে হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। শিশুদের গায়ে জ্বর থাকায় মিষ্টি খাওয়ার আগে দাদিকে দিয়ে নাপা সিরাপ আনানো হয়।

আনিসুর রহমান আরও বলেন, ঘটনার দিন সফিউল্লাহর সঙ্গে ১৫ বার ফোনে কথা বলেন লিমা। ফোনকলের সূত্র ধরেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার কথা। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেয় লিমা। সফিউল্লাহকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান এসপি।

গত ১০ মার্চ রাতে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাঈল হোসেনের দুই ছেলে ইয়াছিন ও মোরসালিনের মৃত্যু হয়। তারা দুজনেই জ্বরে আক্রান্ত ছিল। সেজন্য তাদের নাপা সিরাপ খাওয়ানো হয়েছিল। পরে ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’তাদের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। তবে শুরু থেকেই পুলিশ এ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে। তবে তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি তারা স্পষ্ট করেননি।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on linkedin
LinkedIn
Share on print
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ