নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে আজ সোমবার অর্ধদিবস হরতাল পালন করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। ‘ভোজ্যতেল-চাল-ডাল-পেঁয়াজসহ খাদ্যদ্রব্যের লাগামহীন দাম এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম বৃদ্ধির অপতৎপরতা বন্ধে’ হরতালের ডাক দেয় বাম জোট। ১১ মার্চ ডাকা হরতালের পক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে প্রচারপত্র বিলি, সভা, সমাবেশ, মিছিল ও গণসংযোগ করে জোট। হরতাল সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি বাম জোট আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে হরতালে উসকানি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে ‘অযৌক্তিক ও খোঁড়া অজুহাতে’ হরতাল ডাকা হয়েছে-এমন দাবি করে ঢাকা ও আন্তঃজেলা রুটে বাস-মিনিবাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি।
রোববার পুরানা পল্টনের মৈত্রী মিলনায়তনে হরতাল নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। গণদাবির এ হরতালের পক্ষে মানুষের ব্যাপক সমর্থন ও সাড়া মিলেছে।
সাইফুল হক আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে হরতালের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ প্রচার মিছিল, গণসংযোগ ও প্রচার কার্যক্রমে সরকারি দল ও ছাত্রলীগ হামলা করেছে। অনেক জায়গায় পুলিশ কোনো উসকানি ছাড়াই প্রচার মিছিলে বাধা দিয়েছে। এসব হামলা-আক্রমণে জোটের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এসব হামলা-আক্রমণের পুরো দায় সরকার ও সরকারি দলের। তিনি বলেন, আমরা আশা করি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকার ও সরকারি দল হরতাল কর্মসূচিতে কোনো প্রকার উসকানি দেবে না। বাধা দেবে না অথবা সহিংসতা সৃষ্টির কোনো প্রচেষ্টা চালাবে না। এ ধরনের যে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনার দায় সরকার ও সরকারি দলকেই বহন করতে হবে।
সাইফুল হক জানান, সোমবার ভোর ৬টা থেকে বাম জোটের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা পুরানা পল্টনসহ ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেবেন এবং পিকেটিংয়ে যোগ দেবেন। হরতাল সফল করতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দোকান মালিক, কর্মচারী, পরিবহণ মালিক, পরিবহণ শ্রমিকসহ সব স্তরের ও শ্রেণিপেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার, বাসদ-মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আবদুল আলী, ওয়ার্কার্স পার্টি-মার্কসবাদীর বিধান দাস। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জোটের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, বহ্নিশিখা জামালী, মোশাররফ হোসেন নান্নু, মানস নন্দি, শহীদুল ইসলাম।
হরতালে গাড়ি চালানোর ঘোষণা মালিক সমিতির : এদিকে হরতালে ঢাকা ও আন্তঃজেলা রুটে বাস-মিনিবাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি। শনিবার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা সোমবারের হরতালের ব্যাপারে শনিবার ঢাকাস্থ পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে যৌথ সভা হয়েছে। সভায় পরিবহণ নেতারা জানিয়েছেন, অযৌক্তিক ও খোঁড়া অজুহাতে ডাকা হরতাল মালিক-শ্রমিকরা সমর্থন করেন না। তাই সোমবার ঢাকা শহর এবং আন্তঃজেলার সব রুটে বাস-মিনিবাস চলবে। তবে হরতালের দিন গাড়ি চলাচলে যাতে কোনো প্রকার বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মালিক-শ্রমিকদের যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।