ফিলিস্তিনিদের গাজার বাইরে পাঠাতে ফের ট্রাম্প-নেতানিয়াহু’র বৈঠকে আলোচনা

গাজা উপত্যকা থেকে লাখো ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক অন্যত্র স্থানান্তরের বিতর্কিত প্রস্তাব নিয়ে আবারও আলোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২১ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের অবসানে ট্রাম্পের ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলাকালে বিষয়টি ফের আলোচনায় এলো।

এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার গাজায় এক দিনে আরও ৪১ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। অবরোধের কারণে ত্রাণ না পৌঁছায় খাদ্যাভাবে শিশুসহ অনেকে মানুষ মারা যাচ্ছেন। তবে ইসরায়েলকেও এ নিয়ে কড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। গতকাল তাদের ৫ সেনা নিহত ও ১৪ জন আহত হয়। সম্প্রতি এটা আগ্রাসনকারীদের ওপর হামাসের সবচেয়ে বড় হামলা।

আলজাজিরা জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্র সফররত নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। হোয়াইট হাউসের ব্লু রুমে তারা নৈশভোজে মিলিত হন। নেতানিয়াহু বৈঠকে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ফিলিস্তিনিদের ‘উন্নত ভবিষ্যৎ’ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করছে। তিনি পরামর্শ দেন, গাজার বাসিন্দারা প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যেতে পারে। নেতানিয়াহু বলেন, ‘কেউ থাকতে চাইলে থাকতে পারে। আর যদি চলে যেতে চায়, তাহলে তাদের চলে যাওয়া উচিত। এটি একটি কারাগার হওয়া উচিত নয়। এটি একটি উন্মুক্ত জায়গা হওয়া উচিত। মানুষ স্বাধীনভাবে সেখানে পছন্দমতো ঘুরে বেড়াবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন দেশ খুঁজে বের করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, যারা ফিলিস্তিনিদের একটি উন্নত ভবিষ্যৎ দিতে চায়। আমার মনে হয়, আমরা বেশ কয়েকটি দেশ খুঁজে বের করার কাছাকাছি চলে এসেছি।’

এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বছরের শুরুতে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরিত করে উপত্যকাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানানোর কথা বলেছিলেন, যা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। তিনি দাবি করেছিলেন, ‘আশপাশের দেশ’ থেকে এ বিষয়ে ‘দুর্দান্ত সহযোগিতা’ আসছে। তাই ভালো কিছু ঘটবে। সূত্র জানায়, ইসরায়েলের কোনো প্রতিবেশীই চায় না ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজ মাটি থেকে বাস্তুচ্যুত হোক।

জর্ডানের আম্মান থেকে আলজাজিরার হামদা সালহুত বলেন, ‘এটি এমন একটি বিষয়, যা ইসরায়েলিরা কিছুদিন ধরেই বলে আসছে। ফিলিস্তিনিদের তাদের মাতৃভূমি থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে। অবশ্যই এটা জাতিগত নির্মূল হিসেবে নিন্দার বিষয়।’

হামাসের ব্যাপক প্রত্যাঘাত

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, উত্তর গাজার একটি ঘটনায় তাদের পাঁচ সেনা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দু’জন। টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, বাইত হানুনে আরেকটি ঘটনায় রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরিত হয়ে আরও ১২ সেনা আহত হয়েছেন। হামাস বলছে, ইসরায়েল গাজার মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে পরাজিত করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তারা প্রতিরোধ চালিয়ে যাবেন। ইসরায়েল সামরিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক– সব দিক দিয়েই পরাজিত হয়েছে।

১৮ হাজার শিক্ষার্থীর প্রাণহানি

ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে শিক্ষকসহ কমপক্ষে ১৮ হাজার ২৪৩ শিক্ষার্থী ও কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩১ হাজার ৬৪৩ জন। এর মধ্যে গাজায় ১৭ হাজার ১৭৫ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী নিহত ও ২৬ হাজার ২৬৪ জন আহত হয়েছেন। গাজার কমপক্ষে ২৫২টি পাবলিক স্কুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১১৮টি ধ্বংস হয়েছে। পশ্চিম তীরে ১৫২টি স্কুল, আটটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। জেনিন, তুলকারেম, সালফিট ও তুবাসের বেশ কয়েকটি স্কুলের বেড়াও ধ্বংস করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ