ভারতে চলমান উগ্রবাদ ঢাকতে বাংলাদেশে উগ্রবাদ চলছে বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, এমন মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, রাজপথের পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশকে নিয়ে মিথ্যা ও গুজব ছড়াচ্ছে। তারা ফেক আইডি খুলে এরকম গুজব ছড়াচ্ছে। আমাদের এসব বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। তিনি জনগণকে ফ্যাসিবাদীদের মিথ্যা তথ্য ও গুজবে বিশ্বাস না করার আহ্বান জানান।
শনিবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালি শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার পক্ষে যেসব গণমাধ্যম ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহযোগিতা করেছে তাদের বিচার হবে। এরই মধ্যে কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছেন। এছাড়া তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদেরও আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, অধিকার আদায়ের লড়াই করতে গিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদরা শহিদ হয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন। আবু সাঈদসহ শহিদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আজকে স্বাধীনতা ভোগ করছি। যে আকাক্সক্ষা নিয়ে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন, সেই আকাক্সক্ষাকে বুকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শপথ নিয়ে বলতে চাই আবু সাঈদরা যে কারণে শহিদ হয়েছেন, গণঅভ্যুত্থানের যে আকাক্সক্ষা তারা ধারণ করেছিলেন, সেটি ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আবু সাঈদকে পুরো বাংলার ছাত্রসমাজ অগ্রসৈনিক হিসাবে সব সময় স্মরণ করবে।’
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন গেট উদ্বোধন করেন তথ্য উপদেষ্টা। এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনন্দ র্যালিতে অংশ নেন তিনি। পরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এ সময় আবু সাইদের বাবা মকবুল হোসেন সভা মঞ্চে পৌঁছালে তথ্য উপদেষ্টা তার জন্য নির্ধারিত চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যান। নিজের চেয়ার আবু সাঈদের বাবাকে ছেড়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই শিক্ষককে অনুষ্ঠান মঞ্চে সম্মাননা, আপত্তির মুখে সম্মাননা প্রত্যাখ্যান উপদেষ্টা নাহিদের : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গিয়ে প্রধান অতিথির সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই শিক্ষককে অনুষ্ঠান মঞ্চে সম্মাননা দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের আপত্তির মুখে সম্মাননা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
বক্তব্য শেষে এক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ রায় ও কলা অনুষদের ডিন শফিক আশরাফকে সম্মাননা স্মারক দেওয়ার বিরোধিতা করেন।
এ সময় ওই শিক্ষার্থী বলেন, যারা স্বৈরাচারের সাহায্য করেছে তাদের সম্মাননা স্মারক দেওয়াটা আমরা মানতে পারি না। যাদের আজ সম্মাননা দেওয়া হলো তাদের একজন আন্দোলনে হামলাকারীদের উসকানিদাতা স্বৈরাচারের দোসর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ রায়। অন্যজন কলা অনুষদের ডিন শফিক আশরাফ আবু সাঈদের মৃত্যুর পর বিতর্কিত কলাম লিখেছেন। তাদের সম্মাননা দেওয়া মানে আবু সাঈদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা।
পরে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সম্মাননা স্মারকটি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যে অভিযোগটি তুলেছেন সে বিষয়ে আমি জানতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি যেন আপনাদের অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। ফ্যাসিবাদমুক্ত বেরোবিতে এসে যেদিন আপনাদের দাবি পূর্ণ করতে পারব সেদিন প্রকৃত সম্মাননা গ্রহণ করব।