দেশে প্রথমবার মানবদেহে বসলো ‘কৃত্রিম হৃদযন্ত্র’

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গত ২ মার্চ রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে এক রোগীর দেহে ‘কৃত্রিম হৃদযন্ত্র’ এলভিএডি স্থাপন করেন ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক। সেই রোগীর নাম তাশনূভা (৪২)। তিনি বর্তমানে পুরোপুরি সুস্থ আছেন। মেকানিক্যাল হার্ট নিয়েই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন বলে তাশনূভা প্রতিক্রিয়া জানান।

রোববার (২৭ মার্চ) রাজধানীর সাঁতারকুলের ইউনাইটেড হাউজে আয়োজিত ‘মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্টের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজের সুস্থতার কথা জানান তাশনূভা।

চওড়া হাসি দিয়ে তাশনূভা বলেন, ‘আমি ২০১৬ সাল থেকে হার্টের সমস্যায় ভুগছিলাম। দেশের বাইরে বহু চিকিৎসা নিয়েছি। তবে খুব বেশি শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। করোনাকালে প্রায় দেড় বছর বাইরে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে না পারায় মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এরপর ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের পরামর্শে ও চিকিৎসায় বর্তমানে সুস্থ আছি। সেজন্য সকল চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

 

তাশনূভার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান। পেশায় ব‌্যবসায়ী। স্ত্রীর আরোগ্যে তিনিও বেজায় খুশি। বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথে চিকিৎসা দিয়েছি। এরপর মালয়েশিয়ায়ও করিয়েছি। অনেক দেশ ঘুরে শেষে এক আত্মীয়ের পরামর্শে ইউনাইটেডের ডা. জাহাঙ্গীর কবীরকে দেখাই। উনি আমাদের আশা-ভরসা দেন। সার্জারি করাতে বলেন। প্রথমে ৯০ শতাংশ সফলতার কথা বললেও এরপর জানান ৯৫-এর কথা। প্রথমে রাজি না হলেও ডা. জাহাঙ্গীরের আশ্বাসে সার্জারি করি। আলহামদুলিল্লাহ, সার্জারির ২৫ দিন পর এখন আমার স্ত্রী সম্পূর্ণ সুস্থ।’

 

সার্জারির নেতৃত্ব দেওয়া ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবীর তার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে এই সার্জারি প্রথম হলেও বিশ্বে অনেক আগেই হয়েছে। আমাদের দেশের রোগীদের অনীহা ও খরচের কারণেই এতদিন এরকম অপারেশন সম্ভব হয়নি। দেশের ডাক্তাররাও যে বিশ্বমানের, তারাও যে অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা সফলভাবে করতে পারেন- এই সার্জারি আমাদের সেই সক্ষমতার প্রকাশ।’

ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘আজ থেকে ২০ বছর আগেও বেসরকারি হাসপাতালে হার্টের চিকিৎসা-সার্জারির জন্য আমরা হার্টের রোগী পেতাম না। সরকারি হাসপাতাল ছাড়া কোথাও এই চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। রোগীরা ধুঁকে ধুঁকে মারা যেতেন। মানুষের আস্থা আনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। বেসরকারি পর্যায়ে আমাদের সে অবস্থা ছিল না। তখন থেকে আমি, আমরা আস্থার একটা পরিবেশ তৈরিতে কাজ করেছি। বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি হাসপাতালে এখন হার্টের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আমরা সর্বাধুনিক অনেক সার্জারি করছি।’

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এবি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘আমাদের দেশে অনেক ভালো এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। মেশিনারিজ আছে। আমাদের অনেক অর্জন আছে। যেদিন ডা. জাহাঙ্গীর কবির একজন নারীর মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট করলেন, তার পরদিন আমেরিকা থেকে একজন পরিচিত ডাক্তার আমাকে কল করে জানতে চাইলেন- ‘সত্যি এরকম একটা আধুনিক ও জটিল অপারেশন আমাদের ডাক্তাররা করেছেন কি-না? সেটা সফল হয়েছে কি-না?’ শুনে আমি হাসি। গর্বও হয় আমার। আশা করছি, ভবিষ্যতে এরকম আমাদের বেসরকারি চিকিৎসাখাতে আরো অনেক অপারেশন হবে। যা দেখে-শুনে চমকে উঠবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের চিকিৎসকরা।’’

 

উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ মাত্র ৪২ বছরের একজন হার্ট ফেইল্যুর নারীর দেহে সফলভাবে অস্ত্রোপচার করে মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট করেন ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবীরের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক। অপারেশনের ছয় দিন পর (৮ মার্চ) ওই রোগী হাঁটতে শুরু করেন। ১২ মার্চ তাকে জেনারেল কেবিনে শিফট করা হয়। ১৪ মার্চ তিনি সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করতে পারেন। ২৪ মার্চ তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করা হয়। এমন জটিল একটি অপারেশনের পরে মাত্র ২৫ দিনের মাথায় (২৭ মার্চ) সেই রোগী সাংবাদিকদের সামনে এসে তার শারীরিক অবস্থার কথা বর্ণনা করেন। বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on linkedin
LinkedIn
Share on print
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ