হঠাৎ করে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় শুক্রবার রাতে ঢাকাসহ দেশের সব পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সময় এসব পাম্পে তেল নিতে ভিড় করে শত শত যানবাহন, মোটরবাইক ও ব্যক্তিগত গাড়ি। তেল না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন মোটরসাইকেল চালকরা। এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে চট্টগ্রামে নগর পরিবহণ বন্ধ ঘোষণা করেন পরিবহণ মালিকরা।
রাজধানীর বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে রাতে আগের দামে তেল কিনতে ভিড় করেন মোটরবাইক, বাস ও প্রাইভেটকার চালকরা। কিন্তু রাত ১০টায় দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসার পরই পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন তেল কিনতে যাওয়া গ্রাহকরা। পরে কোথাও কোথাও বিক্ষোভের মুখে আবার তেল বিক্রিও শুরু হয়। কোথাও তেল না পেয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ক্ষুব্ধ চালক ও পরিবহণ শ্রমিকরা।
রাজধানীর প্রগতি সরণিতে তেল ও গ্যাস পাম্পে বিপুল সংখ্যক মোটরবাইক ভিড় করতে দেখা যায়। এতে পাম্প কর্তৃপক্ষ তেল সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে শুরু করে। এমতাবস্থায় তারা তেল বিক্রি বন্ধ করে দেন। এরপর মোটরবাইকাররা সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে লাইনে থাকাদের কাছে আগের দামে কেনা তেল বিক্রি করা হবে বলে ঘোষণা দেয় পাম্প কর্তৃপক্ষ। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে তারা শর্ত জুড়ে দেন-কেউ ২০০ টাকার বেশি তেল কিনতে পারবে না। ওই শর্ত মেনে মোটরবাইকাররা প্রগতি সরণি পাম্প থেকে তেল কেনেন। এসময় ওই পাম্পে সিএনজি বিক্রি বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে রাতে পেট্রোল পাম্পে তেল না পেয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চালক ও পরিবহণ শ্রমিকরা। একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুরের শ্রীপুরেও। রাতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পরপরই ওই এলাকার পেট্রোল পাম্পে বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মহাসড়কের স্টার ফিলিং স্টেশনের সামনে সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করেন বাইকাররা।
শ্রীপুরে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীদের একজন বাইকার আরিফ রাত ১১টার দিকে যুগান্তরকে বলেন, সরকার তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। তা কার্যকর হওয়ার কথা রাত ১২টা থেকে। কিন্তু সরকার থেকে ঘোষণার পরপরই স্টার ফিলিং স্টেশন তেল সরবরাহ বন্ধ করে রাখে।
এ বিষয়ে কথা বলতে স্টার ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক সোহেল রানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ক্যাশ কাউন্টারে থাকা ব্যক্তিও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়েছে। রাত ১২টা পর্যন্ত আগের দরে তেল সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয় সিলেটের বেশিরভাগ তেল পাম্প। মোটরসাইকেল চালকরা রাত ১১টার দিকে তেল নিতে চাইলেও কোনো পাম্পে তেল পায়নি। সিলেটের পাঠানটুলা এলাকায় নর্থইস্ট পাম্পে তেল না পেয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন ক্রেতারা। এসময় টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় তাদের।
এ বিষয়ে নর্থইস্ট পাম্পের মালিক জুবায়ের আহমেদ বলেন, প্রতি শুক্রবার রাত ১০টায় পাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়। আজও তাই হয়েছে। কর্মচারীরা বাড়ি চলে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে পাম্প মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেসব পাম্প দিবারাত্রি খোলা থাকে সেসব পাম্পে ক্রেতা থাকা পর্যন্ত পূর্বের দামে তেল দিতে হবে।
যশোর ব্যুরো জানায়, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে যশোরের তেল পাম্পগুলোর সামনে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের ভিড় লেগে যায়। তবে বেশিরভাগ পাম্পই বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ পাম্পের সামনে ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে ক্রেতাদের।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, রাতে চট্টগ্রামের পেট্রোল পাম্পগুলোতে তেল নিতে ভিড় করে শত শত যানবাহন। কিন্তু অতিরিক্ত মুনাফার জন্য পেট্রোল পাম্পগুলো তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় কোনো কোনো পেট্রোল পাম্পে ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। রাত ১১টায় নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায় আবদুর রহিম নামে এক পিকআপ চালক যুগান্তরকে বলেন, ওই এলাকার মীর ফিলিং স্টেশনে তেল না পেয়ে বিক্ষুব্ধ যানচালকরা চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়ক অবরোধ করেন।
এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ সকাল থেকে যানবাহন না চালানোর ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহণ মালিক গ্রুপ। এক বিবৃতিতে তারা জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে দাবি করেছে। তারা বলেছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি হলে পরিবহণ ভাড়াও বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু সাধারণ যাত্রীরা ভাড়ার চাপ সইতে পারবে না।