সাত মাস আগে গীতিকার মহসিন মেহেদীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সংগীতশিল্পী ন্যানসি। চলতি বছরের শুরুতে জানা যায়, ন্যানসি মা হতে যাচ্ছেন। আপাতত সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায় এই দম্পতি। তবে তৃতীয় সংসারে ভালো নেই ন্যানসি। আর এ কথা তিনি নিজেই অকপটে স্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) রাতে ন্যানসি তার ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দেন। তাতে এমনটা জানান এই শিল্পী।
মহসিন মেহেদীর সঙ্গে অল্প দিনের পরিচয়ের পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন ন্যানসি। যা তাদের দুজনের জন্যই কঠিন ছিল। লেখার শুরুতে তা জানিয়ে ন্যানসি বলেন, ‘আমার আর মেহেদীর সংসার জীবনের বয়স সাত মাস। এদিকে আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমাদের দুজনের জন্যই নতুন করে অল্প দিনের পরিচয়ে একজন আরেকজনের জীবন সঙ্গী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন ছিলো। এরই মধ্যে একটি নতুন প্রাণের জন্ম দেয়া যেন আনন্দের চাইতেও দ্বিগুণ ভীতির। আমার দু’ভাই, ভাবি এবং রোদেলা বাদে দুই পরিবারের কোনো সদস্যদের নতুন অতিথির আগমনের সংবাদে নেই কোনো উচ্ছ্বাস, উল্টো রয়েছে বিদ্রুপ মেশানো হতাশা। সেই সঙ্গে নতুন অতিথির আগমনের সংবাদে অর্থ বা সম্পদ বণ্টনে কে কী পাবে আর কী হারাবে সে সব নিয়ে রয়েছে চুলচেরা হিসাব! আমি নিজেও যেন ভাবতে বসলাম, আচমকাই গোলক ধাঁধায় পড়ে গেলাম। মনে হলো স্বস্তি খুঁজতে গিয়ে অশান্তিকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এলাম। বিয়েটা না করলেই বরং প্রাণে না হলেও জানে বেঁচে থাকতাম।’
ন্যানসি ও তার স্বামীর জীবন-যাপন আলাদা। তাই পরস্পরের বিষয়গুলো বুঝতে সময় লাগছে। আর এতে খানিকটা হাঁপিয়ে উঠেছেন। তা জানিয়ে এই শিল্পী বলেন, ‘দুজনই ভালোবেসে যার হাত ধরেছিলাম সেটা যে কোনো কারণেই হোক, শেষ পর্যন্ত টেকাতে পারিনি। জীবন চলায় ব্যর্থতার তকমা কপালে জুটেছে। এখন দুজন দুজনের কাছে ভালোবাসার পাত্র-পাত্রী হবার চাইতেও আস্থার হয়ে ওঠাটাই যেন বড় পরীক্ষা। আর প্রতিদিনকার জীবন-যাপন করার প্রক্রিয়া দুজনের এতটাই ভিন্ন যে সেটা রপ্ত করাটাও বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার! খাওয়া, ঘুমানো, আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করার ভঙি, নিত্য দিনের কথা বলা, মত প্রকাশ, গান শোনা, সিনেমা দেখা, ঘুরতে যাওয়া, কাছে আসা—এর সবই যেন নতুন করে শিখার বিষয়! মনে হলো অল্প দিনেই বেশ হাঁপিয়ে উঠেছি।’
ন্যানসি
ন্যানসি ও মেহেদীর আগের সংসারে সন্তান রয়েছে। কিন্তু তাদের সন্তানেরা বাবা কিংবা হিসেবে কাউকেই মেনে নিতে পারছে না। তা জানিয়ে ন্যানসি বলেন, ‘পূর্বের সংসারে সন্তান যেহেতু আছে, কাজেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগও আছে। সন্তানদের কারণে উভয়ের জীবনেই প্রাক্তনদের উপস্থিতি আছে। সেটা উভয়ের সবসময় মন থেকে সহজভাবে মেনে নেয়াটা কঠিন। এ যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ। তার ওপর হঠাৎ খেয়াল করলাম আমাদের চাইতেও আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে নাটকীয় উদ্বেগ অন্য অনেকের যেন উথলে উঠছে। মেহেদীর দুই সন্তান তাদের মায়ের বর্তমান স্বামী অর্থাৎ সৎ বাবাকে ঠিকই বহু আগেই হাসিমুখে মেনে নিয়েছে কিন্ত সৎ মা হিসেবে আমাকে সহ্যই করতে পারে না। অন্যদিকে আমার ছোট মেয়ে নায়লা মেহেদীকে কোনোভাবেই সম্পর্ক অনুযায়ী সৎ বাবার আসনটুকু দিতে নারাজ। কিন্ত স্বাচ্ছন্দে তার বাবার জন্য পাত্রী দেখছে এবং তাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথাও বলছে।’
ন্যানসির প্রথম সংসারে রোদেলা নামে একটি মেয়ে আছে। শুধু সেই ব্যতিক্রম। বিষয়টি উল্লেখ করে ন্যানসি বলেন— ‘ব্যতিক্রম আমার বড় মেয়ে রোদেলা। দিন শেষে সে সবাই যার যার মতো করে সুখে আছে এটাই দেখতে চায়। এ কারণে বেচারিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট নোংরা মন্তব্যর মুখোমুখি হতে হয়। আমার রোদেলা! সন্তানের চাইতেও বেশি যে আমার জীবনে মায়ের রূপে এসেছে! আজ আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলতে রোদেলাই আছে এবং থাকবে জানি।’
কন্যা রোদেলা ও নায়লার সঙ্গে ন্যানসি (বাঁ থেকে)
তৃতীয় সংসারে ভালো নেই ন্যানসি। গত সাত মাসের সংসার জীবনে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। এ বিষয়ে ন্যানসি বলেন, ‘এই সাত মাসের পথ চলায় এত বেশি হোঁচট খেয়েছি, সম্পর্কের বিষাক্ত দিক দেখেছি, সন্তানের অবহেলা পেয়েছি, অসম্মানিত হয়েছি, কাছের মানুষগুলোর কাছ থেকে যোগাযোগ হারিয়েছি, সৎ ছেলে-মেয়ের কাছ থেকে নিজের সম্পর্কে বারংবার কটূ কথা শুনেছি, শ্বশুরবাড়ির তিরস্কার দেখেছি, নিজের অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করেছি, পিতা-মাতাহীন নিজেকে অসহায় ভেবেছি, দু’ মুখো মানুষ দেখেছি, থমকে দাঁড়িয়েছি, অবাক হয়েছি, ঘেন্না করেছি, তীব্র ভয় পেয়েছি, কেঁদেছি, টালমাটাল হয়েছি, অভিযোগে দিশেহারা হয়েছি, এত বছরের সংসার জীবনের মাঝপথে নিজেকে একা আবিষ্কার করেছি, চিৎকার করেছি, গালি দিয়েছি, সুন্দর চেহারার আড়ালে কদর্য রূপ দেখেছি, শিক্ষিত মানুষের বিকৃত রুচি দেখেছি, আধুনিকতার নামে বেলেল্লাপনা দেখেছি, নির্মম সত্যের মুখোমুখি হয়েছি, মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি, অভিমানে বোবা হয়ে গেছি, বিশ্বাস হারিয়েছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণের শিকার হয়েছি, সব ছেড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছি, নিজের মৃত্যু কামনা করেছি, মানসিক অবসাদে ভুগে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি—পূর্বে অনেক চড়াই উৎরাই পার হলেও এত কিছু একবারে, একসঙ্গে আগে কখনো ঝড়ের গতিতে জীবনে আসেনি।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বামীর সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করলেও নাখোশ হয় মেহেদীর আগের সংসারের সন্তানেরা। তা উল্লেখ করে ন্যঅনসি বলেন, ‘আমাদের বিয়ে নিয়ে শুরু থেকেই রসালো আলোচনা, সমালোচনা, গবেষণা, নিন্দা, স্বল্প সংখ্যক শুভেচ্ছা, কাল্পনিক গল্পতে ভরপুর ছিল, এখনো আছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও বহাল থাকবে। মেহেদী আর আমার একসঙ্গে ছবি দেখলে মেহেদীর সন্তানেরা তাদের বাবার ওপর নাখোশ হয়। মেহেদী কষ্ট পায়, সেই কষ্টের রেশ আমার সংসার ছুঁয়ে যায়। নায়লাকে চাইলেও আগের মতো নিজের কাছে এনে রাখতে পারি না, সত্যি বললে দীর্ঘ দশ মাস হলো সামনাসামনি দেখিনি। আমারও মন ভার হয়, ফলাফল সংসারে শীতল আবহাওয়া। নিজেদের অজান্তেই প্রতিনিয়ত আমরা স্বামী-স্ত্রী একজন অন্যজনের কাছে অপরাধী! সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বামীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করলে উপহার হিসেবে একগাদা গালি; পরে আতঙ্ক নিয়ে পোস্ট মুছে দিলে পুনরায় সংসার ভাঙার খেতাব! মাঝে মাঝে মনে হয়, বিশ্বজোড়া দজ্জাল শ্বশুরবাড়ি নিয়ে বসে আছি যাদের কাজ হলো আমার খুঁত ধরা।’
ফুল দিয়ে মেহেদী-ন্যানসিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা
তবে তৃতীয় সংসার থেকে বেরিয়ে আসতে চান ন্যানসি? এ প্রশ্নের উত্তরে এই গায়িকা বলেন, ‘এত কিছুর পরও মেহেদী আর আমি সংসার চালিয়ে যেতে চাই, একসঙ্গে বৈরী পথ চলতে চাই, অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে চাই, একে অপরকে জীবনে প্রথম প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলের মতো ভালোবাসি বলতে চাই, হাতের ওপর হাত রেখে ঘুরে বেড়াতে চাই, দিন শেষে সাত মাসের চেনা ঘরে ফিরতে চাই, সংসারের পরিচিত গন্ধে শ্বাস নিতে চাই, নিজেদের আনন্দের মুহূর্তগুলো সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাই, রাত জেগে অহেতুক ঝগড়া শেষে জড়াজড়ি করে ঘুমোতে চাই। কি অদ্ভুত আমাদের চাওয়া পাওয়া!’
২০০৬ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন ব্যবসায়ী আবু সাঈদ সৌরভকে। এ সংসার আলো করে জন্ম নেয় রোদেলা। সৌরভের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নাজিমুজ্জামান জায়েদের সঙ্গে ঘর বাঁধেন ন্যানসি। এ সংসারে জন্ম নেয় নায়লা। গত বছরের এপ্রিলে আলাদা হয়ে যান ন্যানসি-জায়েদ। বিচ্ছেদের কয়েক মাস পর পারিবারিক আয়োজনে গীতিকার মহসিন মেহেদীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ন্যানসি। এটি তার তৃতীয় বিয়ে।