রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, `মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় রেলের সমস্ত এলাকা ট্রেন-প্ল্যাটফর্ম ধূমপান ও তামাক মুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে। যারা এসব এলাকায় ধূমপান করবে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বুধবার দুপুরে রেলভবনে রেলপথ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত `ইনিশিয়েটিভ টু মেক বাংলাদেশ রেলওয়ে টোব্যাকো ফ্রি’শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, `তামাক মুক্ত করতে হলে আগে তামাক যেখান থেকে আসে তার সোর্স বন্ধ করতে হবে। তাহলে তামাকের ব্যবহার কমানো যাবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার আগে মাদক আসা বন্ধ করতে হবে। না হলে মাদক তামাক কোন কিছুই বন্ধ হবে না।’
এ সময় মন্ত্রী বিমানের উদাহরণ টেনে বলেন, `বিমানে যেমন সিগারেট খাওয়ার ব্যবস্থা নাই। ট্রেনেও যখন ভ্রমণ করবে সেই ধরনের বিধিনিষেধ যাতে আনা যায় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার জন্যই আমাদের এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ট্রেনে তামাক ও ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে।’
বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাক মুক্ত করতে প্রায় এক লাখ ১৭ হাজার ইউএস ডলারের এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যার অর্থায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দি ইউনিয়নের। এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে দুই বছর। এই প্রকল্পের আওতায় শিশু-নারী অসুস্থ ব্যক্তি, গর্ভবতী নারীসহ অধূমপায়ী যাত্রীদের পরোক্ষ ধূমপান হতে সুরক্ষা প্রদান করা হবে। একই সাথে পানের পিকমুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রেল স্টেশনের অভ্যন্তরে পান জর্দা/সাদাপাতা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে। একসঙ্গে ধূমপানমুক্ত রেলওয়ে গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া কর্মচারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, টেকসই পদ্ধতি এবং ট্রেন স্টেশনে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন শক্তিশালী করা হবে। ট্রেন স্টেশনে নো স্মোকিং সাইনেজ প্রদর্শন, ডিজিটাল মাইকিংয়ের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।
এ সময় এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রেলওয়ে আইনে ধূমপানের জন্য কামড়া থেকে বহিষ্কার এবং ২০ টাকা জরিমানার বিধান আছে। তবে রেলের এ আইন সংশোধন করা হচ্ছে একই সাথে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।’
এ অনুষ্ঠানে জানানো এক গবেষণার বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘ধূমপায়ী যাত্রীদের ৮৪ দশমিক ৩ শতাংশ স্টেশনে ধূমপান করে, তাঁদের প্রায় ৯১ শতাংশ স্টেশনে খুচরা বিড়ি সিগারেট ক্রয় করে। ধূমপায়ী যাত্রীদের ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ ট্রেনে ধূমপান করে, তাঁদের ৯৪ শতাংশ ট্রেনে খুচরা বিড়ি-সিগারেট ক্রয় করে। অধূমপায়ী যাত্রীদের ৯৩ দশমিক ৪ শতাংশ স্টেশনে ও ৭৩ দশমিক ৩ শতাংশ ট্রেনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। এদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। ট্রেনে ওয়াশ রুম ও দুটি কামরার মধ্যবর্তী স্থানে বেশি ধূমপান হয়। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে সর্বাধিক ধূমপান হয়। এ ছাড়া ওয়াশ রুম এলাকায়ও ধূমপান হয়।’
এ সভায় সভাপতিত্ব করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদারসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বক্তব্য রাখেন।