টাঙ্গাইলে বোরোর বাম্পার ফলন, তবু হাসি নেই কৃষকের মুখে

টাঙ্গাইলে বিগত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে বোরোর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে দফায় দফায় বৃষ্টি হওয়ায় ধান গোলায় তুলতে বিঘ্ন হচ্ছে। অন্যদিকে শ্রমিকের অতিরিক্ত মজুরির কারণে দিশাহারা কৃষক। সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকির মাধ্যমে কম্বাইন হারবেস্টার দিলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

অন্যদিকে পানি জমে থাকা ক্ষেতে মেশিনের মাধ্যমে ধানা কাটাও যায় না। সব মিলিয়ে বোরোর বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকদের মুখে।

কৃষকরা জানান, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে ধান চাষ করতে ধানের বীজ, হাল চাষ, সার ও শ্রমিক মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমিতে সেচপাম্প মালিকের ভাগ বাদ দিয়ে প্রায় ১৮ মণ ধান পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ ধানের মূল্য ৭০০-৭৫০ টাকা। এতে করে তিন মাস পরিশ্রম করেও কৃষকের তেমন কোনো লাভ থাকছে না। বরং বিঘাপ্রতি ৩-৪ হাজার টাকা ক্ষতি যাচ্ছে। অন্যদিকে রোদ না থাকায় দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে অনেকের ধান ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।

এলাকাভেদে তিনবেলা খাবারসহ ধানকাটা শ্রমিকের মজুরি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে এক লাখ ৭১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে চাষ হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ৫৫৩ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২৪ হাজার টন। পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্য বছরগুলোর তুলনায় ফলন বেশি হয়েছে।

সরেজমিন টাঙ্গাইল সদর ও কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পাকা ধান ক্ষেতে অনেক পানি জমে আছে। আবার নিচু ক্ষেতগুলোতে হাঁটুপানি জমে আছে। শ্রমিকরা পানির মধ্যেই ধান কাটছে। অনেক ধান আবার পাকার আগেই ঝড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, শুকনা সময় বিঘাপ্রতি ধান কাটা, আনা ও মাড়াই করতে আটজন শ্রমিক লাগলেও ক্ষেতে পানি থাকায় ১০ শ্রমিক লাগছে। এতে করে কৃষকের সময় ও টাকা বেশি লাগছে।

সদর উপজেলার বাইমাইল গ্রামের কৃষক ইনছান আলী বলেন, আমাদের গ্রামে ধানকাটার মেশিন এলেও ক্ষেতে পানি থাকায় শ্রমিককে বাড়তি মজুরি দিয়ে ধান কাটতে হয়েছে। অন্য বছর খরচ বেশি হলেও শান্তিতে ধান গোলায় তুলতে পারছি। কিন্তু এ বছর ১০-১২ দিন যাবত দফায় দফায় বৃষ্টি হচ্ছে। রোদ না থাকায় আমার প্রায় ৬০ মণ ধান পরিপূর্ণভাবে শুকতে পারিনি।

কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা এলাকার কৃষক হারেজ মিয়া বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে হারভেস্টার মেশিন দিলেও তার কোনো সুবিধা আমি পাইনি। শ্রমিক প্রতি এক হাজার ১০০ টাকা মজুরি দিয়ে ধান কাটতে হয়েছে। ধান চাষ করে বিঘা প্রতি আমার তিন হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলার আউলিয়াবাদ গ্রামের কৃষক তুলা মিয়া বলেন, পানিতে ধান কাটার কারণে মজুরি বেশি। ১২০০ টাকা মজুরি দিয়ে ধান কাটছি। এ ছাড়া তিনবেলা খাবার দিতে হবে। একবার মনে হয়েছিল ধানকাটার চেয়ে না কাটাই ভালো। মানসম্মানের ভয়ে ধান কাটতে হচ্ছে।

পঞ্চগড় থেকে আসা শ্রমিক সুভাষ চন্দ্র ও কালিপদ সাহা বলেন, আমাদের এলাকায় খাবার ছাড়া ৫০০-৬০০ টাকা মজুরি। কিন্তু টাঙ্গাইলে কাজ করছি তিনবেলা খাবারসহ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। যে দিন চাহিদা বেশি থাকে ওই দিন মজুরি বেশি হয়। যে কারণে দূর থেকে টাঙ্গাইলে ধান কাটতে আসি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক মো. আহসানুল বাসার বলেন, চলতি মৌসুমে বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। রোগ ও পোকার আক্রমণ ছিল না বললেই চলে। আশা করি ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত ধান কর্তন প্রায় শেষের দিকে। অন্যান্য বছরের তুলনায় শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকরা একটু সমস্যার মধ্যে পড়েছে।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৫০ শতাংশ ভর্তুক্তিতে ৫০টি কোম্বাইন হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। সেগুলো ধানকাটার কাজেই ব্যবহার হচ্ছে। এ ছাড়া আশপাশের জেলা থেকে মেশিন এনে ধানকাটা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ