জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা সাবেক মন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ বৈষম্য, নিপীড়ন অত্যাচার শোষণ থেকে বাঁচতে মুক্তির আন্দোলন করেছিল, মুক্তি পেতে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল; যাতে নিজের একটা দেশ হয়, আর আমার দেশে আমি হব রাজা। কিন্তু তা কি হয়েছে? রাজ্য সাধন সংশ্লিষ্ট কাজ মানেই রাজনীতি, রাজনীতি আজ ধ্বংসের পথে চলেছে।
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, গণপ্রজাতন্ত্র মানে কী? যে দেশের জনগণ রাজা, এটার মানে হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। কিন্তু রাজা হয়েছে শাসক আর জনগণ হয়েছে শোষিত প্রজা।
পটুয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
দীর্ঘ অর্ধযুগ পর বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) স্থানীয় শিল্পকলা একাডেমি ভবনে আয়োজিত সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, এ দেশটাকে ধীরে ধীরে প্রবর্তন করা হয়েছে। আপনি আমাকে ভোট দিলে ভোট পাবে আরেকজন, আপনি তো আমাকে রাজা বানাতে পারছেন না। ভোট দিয়ে রাজা না বানালে আমি আপনার কথা শুনব কেন? তাই সরকার আজ জনগণের কথা শুনছে না। আগে আপনারা জনপ্রতিনিধি বানাতে পারতেন। আর জনপ্রতিনিধিরা সংসদে গিয়ে জনগণের কথা বলতে পারত, নানা সমস্যার সমাধান দিতে পারত। কিন্তু এখন রাজা হয়েছে শাসক আর জনগণ হয়েছে শোষিত প্রজা। এ দেশের রাজনীতি থাকবে না।
তিনি বলেন, জনগণের কথা বাদ দিয়ে দেশকে অপব্যবহার করছে ক্ষমতাসীনরা। বর্তমানে দুর্নীতিতে সব শেষ। জনগণের জন্য এ দেশ কখনই কল্যাণকর হতে পারে না। দেশের একজন নাগরিককে সরকার যদি বিনামূল্যে আইডি কার্ড দিতে পারে, তাহলে নাগরিকের পাসপোর্ট বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা। অথচ পাসপোর্ট নিতে ঘুষ দিতে হয়। পাসপোর্ট নিতে ঘুস দিতে হবে কেন? ঘুস ছাড়া এদেশে কিছুই হয় না। আজ দেখেন বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ভালো কোনো কাজে সরকারের উপস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সরকার জনগণকে এ দুর্দশা থেকে কীভাবে রক্ষা করবে তা আমার জানা নাই!
তিনি আরও বলেন, ইতোপূর্বে বিএনপি যে কাজ করেছিল, আওয়ামী লীগ এসে তাই করছে। যেটা জাতীয় পার্টি কখনই করেনি আর করবে না। আমরা জনগণের বন্ধু হতে চাই। একমাত্র জাতীয় পার্টি দেশ ও দশের দুঃখ দুর্দশা মুছে দিতে পারবে। এ দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করেছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করছি। আমার ক্ষমতায় এসে এরশাদ সাহেবের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে চাই। দেশকে ঘিরে তার যে স্বপ্ন ছিল তা বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধপরিকর। প্রতিদিন দেশে গুম-খুন হচ্ছে, এরশাদের ৮ বছরের ক্ষমতা আমলে মাত্র ৮ জন মানুষ মারা গেছে, এখন একদিনে ২০-২৫ জনকে হত্যা করা হয়, গুম-খুন দেশে এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনায় দাঁড়িয়েছে। গুম-খুনে দুই দলই সমান, শুধু জাতীয় পার্টিই জনগণের ভরসা। তাই আগামীতে জাতীয় পার্টির হাতকে শক্তিশালী করে চলমান এ দুর্দশা থেকে দেশকে রক্ষার আহবান জানান জিএম কাদের।
আয়োজিত সম্মেলনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সাবেক পর্যটন মন্ত্রী ও সাবেক মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান ঢাকা দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী মীর আব্দুস সবুর আসুদ, জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ইকবাল হোসেন তাপস, প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বরিশাল বিভাগ জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব মেজর (অব.) রানা মো. সোহেল।
অনুষ্ঠানে এ সময় প্রধান বক্তা ছিলেন- জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। আয়োজিত সম্মেলনে সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন-নাসরিন জাহান রত্না আমিন (এমপি)।
সম্মেলন শেষে আগামী দুই বছরের জন্য সুলতান আহম্মেদ হাওলাদারকে সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারকে সাধারণ সম্পাদক করে পটুয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। পরবর্তীতে দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘ অর্ধযুগ পর উৎসবমুখর পরিবেশে পটুয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এ সম্মেলন ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে একাধিক প্রার্থী আবেদন করেছিলেন বলে জানা গেছে।