ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ৬ জনের স্বীকারোক্তি

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ৬ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।

রোববার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে গোপালগঞ্জের ১নং বিচারিক আদালতের সিনিয়র বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ূন কবিরের আদালতে হাজির করে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়।

শুক্রবার গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে র্যা ব ওই ৬ জনকে গ্রেফতার করে। পরে ভিকটিমকে নিয়ে ওই আসামিদের শনাক্ত করে র্যা ব। তারা হলো- রাকিব মিয়া ওরফে ইমন (২২), পিয়াস ফকির (২৬), প্রদীপ বিশ্বাস (২৪), নাহিদ রায়হান (২৪), মো. হেলাল (২৪) ও তূর্য মোহন্ত (২৬)।

এর আগে ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছিল। এদিকে র্যা ব ও পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার আসামিদের সংখ্যা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনায় র্যা ব-৮ এর সহকারী পরিচারক (এএসপি) মো. সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমরা যে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছি ভিকটিমকে নিয়ে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। রোববার তাদের আদালতে পাঠানো হয়। তবে পুলিশ কীভাবে গ্রেফতার করেছে, তা আমরা জানি না। এটা তাদের ব্যাপার।

অপরদিকে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দীকা। রোববার বিকাল ৪টার দিকে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, মামলা তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে কিছুই বলা যাবে না।

আদালত চত্বরে হরিজন সম্প্রদায়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে বাংলাদেশ হরিজন সম্প্রদায় গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি শিপন জমাদ্দার বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় র্যা ব ইতোমধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে। ভিকটিমও ওই ছয়জনকে শনাক্ত করেছে। ছয়জনের মধ্যে হরিজন সম্প্রদায়ের কেউ নেই। তাহলে পুলিশ কেন আমাদের সম্প্রদায়ের দুজনকে ওই মামলায় গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠাল?

ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুর ১২টায় ধর্ষণের ঘটনার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৬ ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রতীকী ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ প্রতীকী ফাঁসি কার্যকর করেন। পরে একটি প্রতিবাদী মিছিল বের করা হয়। সারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে আবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয় মিছিলটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ বিশ্বাস বলেন, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং ছাত্র ও শিক্ষকদের সুরক্ষার দাবিতে ৩ দিন ধরে নানান কর্মসূচি পালন করে আসছি। আমাদের সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

এর আগে বেলা ১১টায় ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদ ও শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পাটগাতী-গোপালগঞ্জ সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপালগঞ্জ জেলা পরিবার। মানববন্ধনে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেন।

সকাল ১০টায় এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলতরত শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং উপাচার্য, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষর্থীদের মুখপাত্র আব্দুল্লাহ আল রাজু অভিযোগ করে বলেন, ধর্ষকদের দোসররা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে তারা নিরাপত্তহীনতায় ভুগছে।

এছাড়া বিকেল ৪টায় ক্যাম্পাসে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ নাটক হয়। সন্ধ্যায় বের করা হয় আলোর মিছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষকদের সভা চলছে। সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তার এক বন্ধুর সঙ্গে গোপালগঞ্জ শহরের হেলিপ্যাড থেকে নবীনবাগের মেসে ফিরছিলেন। এ সময় রাকিব মিয়ার নেতৃত্ব ধর্ষকরা তাদের গতিরোধ করে। বন্ধুকে মারধর করে ওই ছাত্রীকে পার্শ্ববর্তী জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজ ভবনের মধ্যে ঢুকিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ