বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা কাটছেই না। দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো চলছে চরম দ্বন্দ্ব। সচেতন চলচ্চিত্রকারদের প্রশ্ন সমিতির চেয়ারে এমন কী মধু আছে যে, হেরে এবং ফলাফল মেনে নিয়ে ফের ওই চেয়ারে বসার জন্য আদালতের আদেশ অমান্যের ধৃষ্টতা দেখানো যায়।
নির্বাচনে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন চিত্রনায়িকা নিপুণ। গত মঙ্গলবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি দায়ের করার পর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদনটি পাঠিয়ে এই আদেশ দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আদেশে বলা হয়, ১৩ তারিখ চূড়ান্ত শুনানি না হওয়া পর্যন্ত জায়েদ খান বা নিপুণ শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে পারবেন না। অথচ তার এক দিন পরই বৃহস্পতিবার নিপুণ ওই চেয়ারে বসে পড়েন। চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বলছেন, এখন আমরা চাই যেন এমন দুঃসাহস ভবিষ্যতে কেউ দেখাতে না পারে আদালতের সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। এর আগে গত সোমবার জায়েদ খানের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চেয়ারে বসেছেন নিপুণ আক্তার। উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনূরসহ অনেকে। চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠনের নেতারা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বরণ করে নিয়ে নিপুণকে মিষ্টিমুখ করান। নিপুণের টেবিলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেমপ্লেটও রাখা হয়। এমন ঘটনায় জায়েদ খান বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘তারা কি আইন-কানুনের ঊর্ধ্বে চলে গেছে? এটা কিসের বহিঃপ্রকাশ? ক্ষমতা? কোন ক্ষমতাবলে নিপুণ এসব করছেন, সাধারণ মানুষ ভাবলেই বুঝবেন গায়ের জোরে এসব করা হচ্ছে। যেমন শত শত বহিরাগত এনে কথিত আপিল বোর্ড বানিয়ে নিজেকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছেন নিপুণ।’ বুধবারের আদালতের আদেশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়- বিচারক আদালতে বলেন, ‘এই কয় দিন (১৩ ফেব্রুয়ারি রবিবার পর্যন্ত চার দিন) কিচ্ছু হবে না। কেউ ঢুকবেও না, আমি বলে দিচ্ছি।’ রবিবার পর্যন্ত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে কেউই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এর আগে চিত্রনায়ক জায়েদ খান শিল্পী সমিতির নির্বাচনে আপিল বোর্ডের প্রার্থিতা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করেন। সে সময় রিটের শুনানি শেষে আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাই কোর্ট। প্রশ্ন উঠেছে- নিপুণ আইন ভঙ্গ করছেন কি না? সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসে ওই পদে জয়ী হিসেবে শুভেচ্ছা গ্রহণ কতটা আইনসিদ্ধ তা নিয়েও সর্বমহলে প্রশ্ন উঠেছে। এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে নিপুণ বলেন, ‘আমার চেয়ারে বসায় কোনো বাধা নেই’। আবার অভিযোগ অস্বীকার করে নিপুণ বলেন, ‘মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমার নেমপ্লেট যেদিন আমি শপথ নিই সেদিনই তৈরি করা হয়েছিল। আর বৃহস্পতিবার আমি কোনো দায়িত্ব পালন করিনি। সমিতির একজন সদস্য হিসেবে সারা দিন ছিলাম। কমিটির কেউ হিসেবে নয়।’