গাজীপুরে বকেয়া পরিশোধের দাবিতে ফের বিক্ষোভ, ১১ ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ

গাজীপুরে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ না করে টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেলস প্লাস লিমিটেড পোশাককারখানা বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আজ মঙ্গলবার ফের বিক্ষোভ করছে। তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১১ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ করে রাখে। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অবরোধের কারণে যানজটের প্রভাব পড়েছে ভোগড়া বাইপাস সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ আশেপাশের সড়কগুলোতেও। এতে দিনভর ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই সড়কে চলাচলকারীরা।

পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকার টিএনজেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেলস প্লাস লিমিটেড পোশাককারখানার শ্রমিকরা গত জুলাই মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন। মালিকপক্ষ ১৭ তারিখ বিনা নোটিশে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। পরদিন শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে ২৬ দিনের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে শ্রমিকদের জুন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করলেও জুলাই মাসের বেতন পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে কলকারখানা অধিদফতরে মালিক, শ্রমিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ২৫ সেপ্টেম্বর বকেয়া বেতন পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এদিনও কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) শ্রমিকরা বন্ধ কারখানার গেইটে জড়ো হয়ে বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। দিনভর কারখানার সামনে অপেক্ষার পর বকেয়া পাওনাদি না পেয়ে বিকেল ৫টার দিকে তারা কারখানার পাশের দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। শ্রমিকরা রাত দেড়টা পর্যন্ত ওই মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে মধ্যরাতে বৃষ্টির কারণে সড়ক অবরোধ স্থগিত করে চলে যায়। পরদিন মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা পুনরায় কারখানার গেইটে জড়ো হতে থাকে। সকাল ৮টার দিকে তারা ফের ওই মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তাদের সঙ্গে আশেপাশের আরো কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ দেয়। শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় পার্শ্ববর্তী কয়েকটি কারখানা এদিন ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সড়কে অবরোধের কারণে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ আশেপাশের সড়কগুলোতেও দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবরোধকারীদের সড়কের উপর থেকে দিনভর চেষ্টা করে সরাতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে প্রায় ১১ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের ঘোষণা দিলে আন্দোলনরত শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় এবং যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

আন্দোলনরত শ্রমিকেরা জানায়, মলিকপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বেতনের জন্য গতকাল সারাদিন অপেক্ষা করেছি। হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষ বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। তাই আমরা আমাদের সমুদয় বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য সড়ক অবরোধ করি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর মহানগর সভাপতি শফিউল আলম বলেন, মালিকপক্ষ কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেন এবং যাবতীয় পাওনা পরিশোধে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক গত জুলাই মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের তারিখ ছিল ২৫ সেপ্টেম্বর। ওইদিন বেতন পরিশোধ না করায় শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেছিল। পরে আবার ৩০ সেপ্টেম্বর বেতন পরিশোধের তারিখ দিয়ে পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক হাবিল বলেন, ভোগড়ায় টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেলস প্লাস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে ভোগড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বেতন পরিশোধের ঘোষণা দিলে আন্দোলনকারীরা প্রায় ১১ ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে যানবাহন চলাচল শুরু করে।

অপরদিকে, মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকার এমএম নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা টিফিন বিল, নাইট বিল এবং হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে গত দু’দিন যাবত বিক্ষোভ করছেন। মালিকপক্ষ তাদের সমাধান না দেয়ায় সোমবারেও কাজ যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।

এদিকে, মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ডিলাক্স ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। সকালে আন্দোলনরত শ্রমিকেরা আশপাশের কয়েকটি কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেয়। এসময় তারা কর্মরত শ্রমিকদেরকে তাদের সাথে আন্দোলনের যোগ দেয়ার জন্য আহ্বান জানালে বিশৃঙ্খলা এড়াতে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার কয়েকটি কারখানা সোমবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-দুই এর পুলিশ সুপার (এসপি) সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। সেনা সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্টা করছেন।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on linkedin
LinkedIn
Share on print
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ