ইউক্রেনে রুশ হামলার তৃতীয় দিন চলছে। রাশিয়ার বাহিনী রাজধানী কিয়েভে প্রবেশ করেছে। তাদের লক্ষ্য কিয়েভকে দখল নেওয়া। অন্যদিকে ইউক্রেনের বাহিনী শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এ নিয়ে কিয়েভের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র হামলা ও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ইউক্রেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিক্টর লিয়াশকোর বরাত দিয়ে এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার হামলার কারণে তিন শিশুসহ মোট ১৯৮ জন ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন এক হাজার ১১৫ জন। এর মধ্যে ৩৩ জন শিশু।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ, পূর্ব এবং উত্তরের প্রধান ইউক্রেনীয় শহরগুলির চারপাশে যুদ্ধ চলছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আজ স্থানীয় সময় সকালে কিয়েভের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
কিয়েভের নগর কর্তৃপক্ষের মতে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র সেখানকার একটি আবাসিক ভবনে আছড়ে পড়ে। আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র রাজধানীর ঝুলিয়ানি বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরিত হয়েছে বলে রিপোর্ট করেছে রয়টার্স।
শহরের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেছেন, কিয়েভে রাতভর লড়াইয়ে দুই শিশুসহ ৩৫ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদমাধ্যম ইন্টারফ্যাক্স ও স্পুটনিক জানিয়েছে, রুশ সেনারা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোরিঝিঝিয়ায় মেলিটোপল শহর দখল করেছে। মেলিটোপল হল ইউক্রেনের মূল বন্দর মারিউপোলের কাছে একটি মাঝারি আকারের শহর। যেখানে অন্তত দেড় লাখ মানুষ বাস করেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি টুইটারে নিজের একটি সেলফি ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন , অনলাইনে প্রচুর মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে যে, আমি আমাদের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি এবং সেখান থেকে তাদের সরিয়ে নিচ্ছি।
‘আমি এখানে আছি। আমরা আমাদের অস্ত্র রাখব না। আমরা আমাদের রাষ্ট্রকে রক্ষা করব,’ বলেন তিনি।
জেলেনস্কিকে ইউক্রেন থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ওয়াশিংটন প্রস্তাব করলেও সেটা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে, মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করেছে।
জেলেনস্কি এর জবাবে বলেছেন, ‘এখানে লড়াই চলছে। আমার গোলাবারুদ দরকার, কোথাও সরে যাওয়ার নয়।’, সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাতে খবরটি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।
ইউক্রেন সেনাবাহিনীর একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা গিয়েছে যে, তাদের সেনারা রুশ হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। কিয়েভের একটি সেনা ইউনিট প্রধান সিটি এভিনিউ থেকে রাশিয়ান বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে।
শনিবার একটি ফেসবুক পোস্টে তারা জানায়, কিয়েভের একটি সেনা ঘাঁটিতে রাশিয়ান সৈন্যরা আক্রমণের চেষ্টা করলে তারা এর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।
ইউক্রেনীয় বাহিনীর দাবি, তারা কৃষ্ণ সাগরের শহর মাইকোলাইভে থেকে রাশিয়ানদের সফলভাবে সরিয়ে দিয়েছে। সেইসঙ্গে কিয়েভ সেনা ঘাঁটিতে হামলা ঠেকিয়েছে।
এর আগে, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে রাশিয়ান বাহিনী চেষ্টা করছে রাজধানী কিয়েভ পুরোপুরি দখলে নেয়ার। এরপর তারা দেশটির নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করবে।
রাজধানীতে, মাইডান স্কয়ারের কাছে একটি বড় ধরণের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং শহরের ত্রয়েশ্চিনা এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কিয়েভের ওপর গোলা হামলার শব্দ এতোটাই তীব্র ছিল যে শহরের কেন্দ্র থেকে কয়েক মাইল দূর পর্যন্ত শব্দ পেয়েছেন তারা।
কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, শহরের চিড়িয়াখানার কাছে এবং শুলিয়াভকা শহরের আশেপাশে ৫০টিরও বেশি বিস্ফোরণ এবং ভারী মেশিনগানে গোলাগুলি হয়েছে।
ফক্স নিউজের সংবাদদাতা ট্রে ইংস্ট বলেছেন, কিয়েভ ‘এই মুহূর্তে একাধিক দিক থেকে’ আক্রমণের শিকার হয়েছে।
ইউক্রেনীয় স্টেট স্পেশাল সার্ভিসের মতে, রাজধানীর ট্রয়েসচিনা এলাকার সিএইচপি-৬ পাওয়ার স্টেশনের কাছে তীব্র লড়াই চলছে। এই হামলার মাধ্যমে পুরো শহরটিকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে।
কিয়েভের পেরেমোহি অ্যাভিনিউতে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ এবং বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
ভাসিলকিভের একটি বিমান ঘাঁটির কাছে তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে রাশিয়ান প্যারাট্রুপাররা কিয়েভের ওপর হামলা চালানোর জন্য এই ঘাঁটিকে তাদের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করবে।