দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিপক্ষে গেছে। শনিবারের অনাস্থা ভোটে তার পরাজয় আসন্ন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এর পর কোন দিকে যাচ্ছে পাকিস্তানের রাজনীতি?
ইমরান খানকে নিয়ে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার। সুপ্রিমকোর্ট বৃহস্পতিবার তা ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে বাতিল করে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আহ্বানে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জাতীয় পরিষদ পুনরুজ্জীবিত করে শনিবার অধিবেশন শুরুর পাশাপাশি আস্থা ভোটের ফয়সালা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ।
বিরোধী জোটের উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর গত রোববার পার্লামেন্টে ভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে ক্ষমতাসীন দল তেহরিক-ই-ইনসাফ তা হতে দেয়নি। ডেপুটি স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করার পর পরই সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। এখন নিজেদের পক্ষে আদালতের রায় পেয়ে সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা।
অন্যদিকে ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনীতিতে এসে প্রধানমন্ত্রী বনে যাওয়া ইমরান খান আদালতে হারলেও ‘শেষ বল পর্যন্ত’ খেলে যাওয়ার অঙ্গীকারের কথা বলেছেন।
শুক্রবার তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন, বিকালে তার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ারও কথা আছে। সেখানে তিনি কী বলবেন, তা নিয়ে পাকিস্তানে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
যেভাবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো?
অর্থনীতিকে সঠিক পথে আনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন ইমরান খান, যার নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতেছিল পাকিস্তান।
জনগণের একাংশের কাছে তার জনপ্রিয়তা এখনও অটুট থাকলেও, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সমর্থন হারাতে শুরু করেন ইমরান। মূলত মূল্যস্ফীতির হার দ্রুত বেড়ে চলায় এবং বিদেশি ঋণের বোঝা তাকে সংকটে ফেলে দেয়।
ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাধ পূরণ হয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সমর্থন পাওয়ার মধ্য দিয়ে। সেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হলে তার বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করে।
অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, বর্তমান সংকটের শুরু গত অক্টোবরে, যখন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাকিস্তানের ক্ষমতাশালী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের নতুন প্রধানের নিয়োগপত্রে সই করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত তিনি সামরিক বাহিনীর পছন্দ করা ব্যক্তিকেই নিয়োগ দিতে বাধ্য হন, কিন্তু ততক্ষণে মাঠ অনেকটা বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
বিবিসি বলছে, ইমরানের অবস্থানের দুর্বলতা টের পেয়ে তার জোটের শরিকদের নিজেদের পক্ষে টানতে শুরু করেন বিরোধীরা। এতে কাজও হয়। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক করাচিভিত্তিক এমকিউএমকে নিজেদের জোটভুক্ত করে বিরোধী দল। আর এতেই উল্টে যায় পাশার ছক।
৩৪২ আসনের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে অন্তত ১৭৩ সদস্যের সমর্থন পেতে হবে। কিন্তু ইমরান বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব তোলার আগেই ১৭৭ সদস্যের সমর্থন জড়ো করে ফেলে।
পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হলে ইমরানের উইকেট যে টিকবে না, সে বিষয়ে তিনি নিজেও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন। আর সে কারণে আস্থা ভোটের লজ্জা এড়াতে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার কৌশল নিয়েছিলেন।
সুপ্রিমকোর্ট রায় অনুযায়ী শনিবার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে। সেই ভোটেই হয়তো প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইমরান খানের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে।
ইমরানের দল আস্থাভোটে হেরে গেলে বিরোধী দলগুলো জোট গড়ে তাদের একজন প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করতে পারবে। ২০২৩ সালের অগাস্টে বর্তমান পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে, অথবা আগাম নির্বাচনও দেওয়া হতে পারে।
বৃহস্পতিবার রায়ের পর প্রধান বিরোধী দল মুসলিম লীগের (এন) নেতা শাহবাজ শরিফ তার জোটসঙ্গীদের পাশে রেখে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শরিকরা তাকেই প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রার্থী মনোনীত করেছেন।
আদালতের রায়ে মন্ত্রিসভা পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পর শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাশাপাশি দলের পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গেও তিনি বসবেন। বিকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।
এক টুইটে ইমরান লিখেছেন, দেশের মানুষের প্রতি এটাই আমার বার্তা, সবসময় যা করে এসেছি, ভবিষ্যতেও তাই করব। শেষ বল পর্যন্ত পাকিস্তানের জন্য লড়ে যাব।
সূত্র: বিবিসি।