আজ দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। প্রথম দুই ওয়ানডেতে একটি করে জিতেছে দুই দল, প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ম্যাচ জিতেছে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে প্রবলভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় শুরু হবে খেলা। তবে তার আগে বাংলাদেশের সামনে অনেক প্রশ্ন, এক ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে জিতেছে আরেক ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে হেরেছে। তাই টস জয় মনে দ্বিধা আনবে এটুকু বলে দেয়াই যায়। তবে ওয়ান্ডারার্সের চেয়ে সেঞ্চুরিয়নে আগে ব্যাট করাটা স্বস্তিদায়ক, কারণ এখানে পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগে ব্যাট করা দল জয় পায় বেশি, যেমনটা প্রথম ম্যাচে পেয়েছে বাংলাদেশ।
তবে দ্বিতীয় ম্যাচে তামিম ইকবাল গণমাধ্যমে বলেছিলেন পরিসংখ্যান দেখেই তিনি ব্যাটিং নিয়েছেন।
পরিসংখ্যান অবশ্য উল্টো তথ্য দেয়, ইতিহাস বলে এই মাঠেই অস্ট্রেলিয়ার করা ৪৩৪ রান তাড়া করে ঐতিহাসিক ম্যাচ জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা, সেটাও আজকের তারিখ থেকে প্রায় ১৬ বছর আগে ২০০৬ সালে।
মানসিক বাধা পার হতে হবে
প্রথম দুটি ম্যাচেই যে দল মানসিকভাবে যতটা প্রস্তুত ছিল সেই দলই বেশি এগিয়ে ছিল বলে মনে করেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস সুবিধার নয়, সেখানে ওয়ানডে বা টেস্ট কখনোই জেতেনি এর আগে বাংলাদেশ।
তাই ফাহিমের মতে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ক্রিকেটটা ছিল চমকে দেয়ার মতোই।
একই সাথে দ্বিতীয় ম্যাচেও দক্ষিণ আফ্রিকা যে ওভাবে ঘুরে দাঁড়াবে সেটা বাংলাদেশ ভাবেনি বলেই মনে করেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাড়তি বাউন্সেই ভুগেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, এটা স্বীকার করছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
একই সাথে দক্ষিণ আফ্রিকাও কিছু পরিবর্তন এনে আরো আগ্রাসী একটা একাদশ মাঠে নামিয়েছিল ওয়ান্ডারার্সে।
ওয়েইন পারনেল চোটের কারণে পুরো ম্যাচ খেলতে পারেননি, তবে তাবরায়েজ শামসি ও কুইন্টন ডি কক দলে ঢুকেই বড় ভূমিকা রেখেছেন এই ম্যাচে।
তাই তৃতীয় ম্যাচ নিয়ে নিজের বিশ্লেষণে বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্টের সাবেক ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন যে এখানে দুই দলই প্রস্তুত থাকবে, তারা তাদের ভুলভ্রান্তি ও শক্তিমত্তা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেছে এখন যে দল মাঠে এসব ধারণার সঠিক ব্যবহার করতে পারবে তারাই জিতবে।
তবে দ্বিতীয় ম্যাচটায় বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ভঙ্গুর ব্যাটিংটাই ভাবাচ্ছে দলকে, তবে ফাহিমের মতে এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
ক্রিকেট এমনই, বলতে গেলে স্পোর্টস এমনই একটা ব্যাপার আসলে। এখানে আমি একটা উদাহরণ দেই, ভারত অস্ট্রেলিয়া গিয়ে ৩৬ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর ভারতের ঘুরে দাঁড়ানো।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে প্রথম টেস্টেই ভারত ৩৬ রানে অলআউট হয়ে টেস্ট ম্যাচ হেরে যায়, এরপর মেলবোর্নে পরের টেস্টেই ভারত ৮ উইকেটের জয় পায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
তাই এক ম্যাচে বিপর্যয় বা ধস নিয়ে বিচলিত না হওয়ার কথা বলছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
টপ অর্ডারের ভালো করা
গত কয়েক ম্যাচ ধরেই এমন হচ্ছে টপ অর্ডার ভালো করলেই বাংলাদেশ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারছে।
কিন্তু অধিকাংশ ম্যাচেই টপ অর্ডারে ধস দেখা দিচ্ছে, এই দ্বিতীয় ওয়ানডের মতোই।
যদিও বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত বছর ওয়ানডে সিরিজে জয় পেয়েছে কিন্তু টপ অর্ডারের ব্যর্থতা চোখে পড়ার মতো দুই সিরিজেই।
বাংলাদেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনটি ম্যাচে বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে যথাক্রমে ৯৯, ৭৪ ও ৮৪ রানে।
জিম্বাবুয়েতেও একই পরিস্থিতি, হারারেতে প্রথম ম্যাচে ৭৪ রানে, দ্বিতীয় ম্যাচে ৭৫ রানে বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে।
এই কিছুদিন আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ১৮ রানেই চার উইকেট চলে যায়, ৪৫ রানে ছয় উইকেট।
নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে, যে কোনো ক্রিকেট ম্যাচে ভালো শুরুটা পুরো দলের মধ্যেই আত্মবিশ্বাস এনে দেয়, ভার কমে।
শুরুতেই উইকেট এনে দেয়া
শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ যেভাবে বোলিং করেছেন প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে, তাতে একদম প্রথম দশ ওভারের ভেতরই চাপে পড়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এটাই প্রয়োজন যে কোনা দলের, বলছেন ফাহিম।
একই কাজ দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য করেছেন কাগিসো রাবাদা। তিনি পাঁচ উইকেট পেয়েছেন।
তাসকিন প্রথম দিন ৬০ বল করে তার মধ্যে ৪০টি ডট বল দিয়েছেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কোনো একজন বোলার কম খরুচে স্পেল করলে সেটা গোটা দলকেই নির্ভার করে।
ক্রিকেট পর্যবেক্ষক তৌসিয়া ইসলাম মনে করেন, বাংলাদেশ যেহেতু ঘরের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে বাদে অন্য দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতেনি তাতে এই একটা ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য একটা বড় উপলক্ষ্য, বাড়তি প্রেরণা পাবে দলটি।
সূত্র : বিবিসি