পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের সব রুটে আকাশপথের ভাড়া নিয়ে চলছে অরাজকতা ও নৈরাজ্য। কোনো কারণ ছাড়া বিমান সংস্থাগুলো হঠাৎ এসব রুটে ভাড়া হাঁকাচ্ছে দ্বিগুণের বেশি। ভারতের সব রুটে ভাড়া বেড়েছে ৩-৪ গুণ। কোনো কোনো দিন এই ভাড়া ৮/১০ গুণও গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
এপ্রিল পর্যন্ত সৌদি আরবের টিকিট নেই ট্রাভেল এজেন্টগুলোর কাছে। সরাসরি এয়ারলাইন্সগুলোয় এ রুটের ভাড়া দিতে হয় ৩ গুণ বেশি। ৪০ হাজার টাকা ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমান ভাড়া এখন ৯২ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তাও মিলছে না। ৪৫ হাজার টাকার ঢাকা-দুবাইয়ের রিটার্ন ভাড়া এখন ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব রুটের ভাড়া নিয়ে এভাবে চলছে অরাজকতা। চিকিৎসা ও স্টুডেন্ট ভিসাধারী ভারতগামী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একদিকে টিকিট নেই, অপরদিকে টিকিটের দাম ৮/১০ গুণ বেশি। সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের অভিযোগ-ভিসার শর্ত হিসাবে আকাশপথে যাওয়ার কথা উল্লেখ থাকায় এই ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। ভিসায় আকাশপথ উল্লেখ থাকায় অন্য কোনো পথে যাওয়ারও সুযোগ নেই যাত্রীদের।
এদিকে টিকিটের উচ্চমূল্যের পাশাপাশি কোনো কোনো দেশের টিকিট হাওয়া হয়ে গেছে। আগামী জুলাই পর্যন্ত চীনের কোনো রুটে টিকিট নেই। খোদ চীনের নাগরিকরা তাদের দেশে ফিরতে পারছেন না টিকিট না থাকায়। বাংলাদেশ থেকে দুটি এয়ারলাইন্স চীনের কয়েকটি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করলেও আগামী জুলাই পর্যন্ত তাদের হাতে কোনো টিকিট নেই। চীনগামী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভ্রমণ তো বন্ধই রয়েছে। এই অবস্থায় চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে এরকম হাজার হাজার বাংলাদেশিকে চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে।
ভাড়া কমানোর জন্য গত ডিসেম্বর থেকে আটাব (অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ) ও বায়রা (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি) নেতারা আন্দোলন করলেও সুফল মেলেনি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে কোনো সাড়া না পেয়ে যাত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চেয়েছিলেন। খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আকাশপথের ভাড়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ করেছিলেন।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শল এম মফিদুর রহমান বলেছেন, এভাবে কোনো কারণ ছাড়া আকাশপথের ভাড়া বৃদ্ধির ঘটনা দুঃখজনক। তিনি বলেন, কমার্শিয়াল ইস্যুতে বেবিচকের হস্তক্ষেপ করার তেমন সুযোগ নেই। তারপরও আমরা এয়ারলাইন্সগুলোকে ডেকে ভাড়া কমানোর নির্দেশ দিয়েছি। কারণ নেপাল, পাকিস্তানসহ আশপাশের কোনো দেশের বিমান ভাড়া বাড়েনি। শুধু ঢাকা থেকে কেন এত ভাড়া বাড়বে? এমন যুক্তি দেখিয়ে কৈফিয়ত চাওয়ার পরও তারা কোনো সাড়া দেয়নি। উলটো এয়ারলাইন্সগুলো ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের চার্জ বাড়িয়েছে, তাই ভাড়া বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইউরোপের রুটগুলোয়ও ভাড়া নিয়ে চলছে অরাজকতা। ঢাকা থেকে দুবাই হয়ে কানাডায় যেতে আগে ভাড়া ছিল ৭০ হাজার টাকা। বিদেশি টার্কিস এয়ারলাইন্স এখন ভাড়া নিচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি। দুবাই যেতে কাতার এয়ারওয়েজের কাছে গুনতে হচ্ছে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকার বেশি অর্থ। যতই ঘণ্টা পেরুচ্ছে, ততই দাম বাড়ছে টিকিটের। অথচ সপ্তাহ খানেক আগে একই টিকিটের দাম ছিল ৬৫ হাজার টাকা।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিক ও ওমরাহ যাত্রীরা। বাংলাদেশ বিমান আর সৌদি এয়ারলাইন্সের এ রুটের টিকিট উধাও হয়ে গেছে অনেক আগে। মার্চ পর্যন্ত এ দুটি বিমান সংস্থার ঢাকা-জেদ্দা রুটের টিকিট মিলছে না। ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, প্রতিবছর এ সময়ে একটি সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বিমানের ভাড়া বাড়ায়। এভাবে হাতিয়ে নেয় শত শত কোটি টাকা।
যাত্রীরা বলেছেন-বাংলাদেশ বিমান, এমিরেটস, কাতার, টার্কিশ, ফ্লাই দুবাইসহ সব এয়ারলাইন্সের ভাড়া আকাশচুম্বী। এই অস্বাভাবিক ভাড়ায় দিশেহারা প্রবাসী কর্মীরা। তারা বছরে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠান, এর একটি বড় অংশ লুটে নিয়ে যাচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলো
আটাব নেতা শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, টিকিটের দাম বৃদ্ধি ও বুকিং পদ্ধতিতে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দরকার। এয়ারলাইন্সগুলোকে একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় ভাড়া নির্ধারণ করে যাত্রীদের স্বার্থ দেখতে হবে সবার আগে। এপ্রিল থেকেই আকাশপথের ভাড়ায় অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।