চিন্তাবিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, দেশে শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের কোনো সংযোগ নেই। এর অন্যতম প্রধান কারণ, দেশে ভালো শিক্ষকের অভাব। আগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যা সময়ের ব্যবধানে দুরত্বে রূপ নিয়েছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: কোন পথে?’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাবি পাঠক ফোরামের তিন যুগপূর্তি উপলক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, “আগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে ছিল ‘হাইফেন’, এখন সেটি হয়ে গেছে ‘লম্বা ড্যাশ’। এই ড্যাশ বড় হতে হতে পৃথিবীর পরিধির সমান হয়ে গেছে। ফলে শিক্ষক একদিকে, শিক্ষার্থী আরেকদিকে, মাঝখানে রয়ে গেছে কেবল প্রতিষ্ঠান।”
তিনি আরও বলেন, “যদি শিক্ষাকে স্থায়ী করতে হয়, তবে তাকে আনন্দদায়ক করে তুলতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রথম শর্ত হলো পাঠক তৈরি করা। পাঠক মানেই শ্রোতা, দর্শক—অর্থাৎ এমন মানুষ, যে তার সমস্ত ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে শিক্ষালাভ করতে পারে। কিন্তু এ ধরনের শিক্ষা আমরা তৈরি করতে পারিনি।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই দেশ দুইবার স্বাধীন হয়েছে—১৯৪৭ সালে এবং ১৯৭১ সালে। অথচ স্বাধীনতার প্রায় ৮০ বছর হতে চললেও আমরা এখনো শতভাগ শিক্ষিত সমাজ গড়ে তুলতে পারিনি। দেশে যারা স্বাক্ষর করতে পারে, তাদেরই পাঠক ধরা হয়। কিন্তু বাস্তবে ইউনেস্কোর হিসেবে পত্রিকা পাঠ করেন মাত্র ৫-৬ শতাংশ মানুষ।”
সেমিনারের প্রধান অতিথি রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “শিক্ষা সংকটে পথ দেখায়। আমরা যখন সমস্যায় পড়ি, তখন শিক্ষা আমাদের সমাধানের দিক নির্দেশনা দেয়। তবে মানুষের অধিকার, ইনসাফ ও সামাজিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকলে উচ্চশিক্ষা অর্থহীন হয়ে পড়ে।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রাবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম. রফিকুল ইসলাম, রাবি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, পাঠক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফ হাসনাত প্রমুখ।