ইরফান আহমদ নেহায়েত বদমেজাজি মানুষ। যখনই ঘরে আসে, পুরো ঘর নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তার মা, বোন, ছোট ভাই— সবাই তাকে ভয় পায়, না-জানি কখন কাকে ধমক দিয়ে বসে।
খাওয়াদাওয়ার সময় কোনো কিছু তার মনমতো না হলে একদম পাগলের মতো হয়ে যায়, থালাবাসন ছুঁড়ে মারে। প্রতিদিনই তার এধরনের খারাপ কিছু না কিছু ঘটেই, ফলে ঘরের পরিবেশ একদম নষ্ট হয়ে গেছে, কারও মনেই শান্তি নাই।
একদিন ইরফান সাহেব তার স্ত্রীর সঙ্গে বসেছিলেন। আজ কোনো কারণে তার মন খুব ভালো। তার হাসিখুশি মুখ দেখে স্ত্রী বললেন, ‘জানেন, আপনার কাছে কোনোদিন কোনো কিছু চাইনি।’
ইরফান সাহেব বললেন, ‘হ্যাঁগো বউ, আসলেই তুমি নিজের জন্য কোনোদিন কিছু চাওনি।’ স্ত্রী বললেন, ‘আজকে যদি আমি কিছু চাই, দিবেন?’ ইরফান সাহেব বললেন, ‘কেন দিব না, তুমি যা চাইবে তা-ই দিব। তুমি হৃদয় চাও, তা-ও বের করে তোমার হাতে দিব।’
স্ত্রী বললেন, ‘না, তার প্রয়োজন পড়বে না। আপনি দিতে পারবেন না।’ ইরফান সাহেব আবেগে বললেন, ‘তুমি চেয়েই দেখো না, তারপর দেখো আমি দিতে পারি কি পারি না।’ তারপর স্ত্রী বললেন, ‘আমি আপনার কাছে আর কিচ্ছু না, শুধু একটা জিনিসই চাই— আপনি রাগ করা ছেড়ে দিন।’
ইরফান সাহেব এই বাক্য শুনে একদম থ হয়ে গেলেন। তিনি ওই সময়ই ওয়াদা করলেন, ‘আজ থেকে আমি রাগ করা ছেড়ে দিলাম।’
এরপর দশ বৎসর পার হয়ে গেছে। ইরফান সাহেব এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ। তিনি ঘরের সবার সাথে হাসি-হাসি মুখে কথা বলেন। সবাইকে ভালোবাসেন। বিভিন্ন কাজে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। খাবারের টেবিলে যা-ই দেওয়া হয়, অভিযোগ ছাড়াই খেয়ে নেন। তিনি তার মতের বিপরীত কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেন, তারপর কোনো সিদ্ধান্তে যান।
এই পরিবর্তন ইরফান সাহেবকে লাভবান করে তোলে। এখন তার শরীর-স্বাস্থ্য আগের তুলনায় অনেক ভালো। আগের চেয়ে এখন কাজকর্মেও বেশি মনোযোগ দিতে পারেন। বাহিরের মানুষের সাথেও তার আচরণ ভালো, ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে তিনি ভালো মুনাফা লাভ করছেন।
রাতের বেলায় তার খুব আরামে ঘুম হয়, অথচ আগে ভালো ঘুম হতো না, অস্থির অস্থির লাগত। শুধুমাত্র একটি বদস্বভাব দূর করার কারণে তার গোটা জীবন সুখময় হয়ে উঠে।
আল্লাহর রাসুল (সা.) একবার সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কাকে তোমরা অধিক শক্তিশালী মনে করো?’ তারা উত্তর দিলেন, ‘যে ব্যক্তি কুস্তিতে অন্যকে হারিয়ে দিতে পারে।’
আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘সে প্রকৃত বীর নয় যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সে-ই প্রকৃত বীর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।’ ( সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৬৮৪)