শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে ভাষাশহীদদের স্মরণ করছে জাতি। একুশের প্রথম প্রহরেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শুরু হয়েছে এই শ্রদ্ধা নিবেদন। যা একুশের সকালেও অভ্যাহত ছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। যেখানে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে ফুটে উঠেছে একুশ নিয়ে এই প্রজন্মের ভাবনা।
মেয়েকে নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসেছেন ডা, সামসুন্নাহার রনি। তিনি একটি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে গিয়ে জানান, ছোট থেকে আমি পরিবারের শিক্ষা পেয়েছি যে এই দিনটিতে শহীদ মিনারে এসে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো উচিত। আমিও আমার শিশুদের সেটিই শেখাতে চাই। তবে আমি মনে করি শুধু একটি দিন নয়, বছরের প্রতিটি দিন বাংলা ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার করা উচিত, এই ভাষাটা নিয়ে আমাদের আরও গর্ব করা উচিত।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ঘড়ির কাঁটায় সকাল যখন ৭টা, পলাশী মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায় শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা মানুষের সারি পলাশী মোড় ছাড়িয়ে নিউমার্কেট এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। কারো হাতে একটিমাত্র ফুল, কারো হাতে একগুচ্ছ। কারো হাতে ছোট পতাকা। তবে সবার মুখে অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি। ’ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মাইকে সেই সুর ছড়িয়ে পড়ছিল দিকে দিকে। মানুষের এই শ্রদ্ধা বলে দিচ্ছিল, মাতৃভাষা আর দেশের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের টান অকৃত্রিম।
কথা হয় শ্রদ্ধা জানাতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একুশ আমাদের অহংকার। ৫২ আমাদের সাহসী হতে শিখিয়েছে। যারা আমাদের এই সাহস দিয়েছে, তাদের স্মৃতির উদ্দেশেই ফুল দিতে যাচ্ছি। ’
সোমবার অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অহংকার আর শোকের এই দিনটি পালন করছে জাতি। একুশের প্রথম প্রহরে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ বাজানো হয়।
গত বছরের মতো এবারও কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতির কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সশরীরে শহীদ মিনারে আসেননি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।