রোহিঙ্গাদের নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে এপিবিএন পুলিশ, বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, উখিয়া ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে।
বুধবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের তাজনিমারখোলায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সরজমিনে পরিদর্শনের সময় নয়া দিগন্তকে এই কথা বলেন ১৪ এপিবিএন পুলিশের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) নাইমুল হক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণের সাথে। রোহিঙ্গাদের জীবন মান উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের শান্তিময় জীবনযাপনে সহায়তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে।’
নাইমুল হক বলেন, ‘এখানে কেউ উগ্রপন্থী বা বেআইনি কাজ করে পার পাবে না। স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সহাবস্থান বিদ্যমান রয়েছে। পুরো কক্সবাজার জেলার স্থানীয় বাসিন্দা ও উখিয়া – টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে কোনোভাবেই ব্যাহত হতে দেয়া যাবে না।’
তাজনিমারখোলা ১০ নং ব্লকের রোহিঙ্গা শরণার্থী আবদুল আমিন বলেন, ‘২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এক কাপড়ে আমি ১৯ নং ক্যাম্পে অবস্থান করি। এখানকার স্থানীয় জনগণ ও সারা বাংলাদেশের মানুষ আমাদের সাহায্য করেছেন। এখনো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আমাদের সহায়তা করছে। ২০১৭ সালে এখানকার রাস্তা-ঘাট ছিল খুবই নাজুক। এখন ক্যাম্পকেন্দ্রিক সকল রাস্তা পাকা ও মজবুত হয়েছে। আগের অবস্থার চেয়ে বর্তমান অনেক ভালো। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। আমরা এ ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে আমাদের আত্নীয়দের সাথে সামাজিক বন্ধন অটুট রাখতে পারছি।’
তিনি বলেন, ‘যদিও মিয়ানমারে আমাদের প্রচুর জায়গা-জমি ও দোকানপাট ছিল। এখানে ক্যাম্পের জীবন মেনে নিয়ে শান্তিতে আছি। আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী যথাযথভাবে পাচ্ছি।’
একই ব্লকের ছলিম উল্লাহ জানান, ‘মিয়ানমারে সব হারিয়ে প্রাণ বাচাঁতে আমরা এদেশে আশ্রয় নিয়েছি। এখানকার সার্বিক পরিবেশ সহনীয় পর্যায়ে আছে। এরপরেও বলি মানুষের অভাবের শেষ নেই। যা পাই তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার ১১ সদস্যের পরিবার। করোনাভাইরাস বা ওমিক্রনের এই সময়েও আল্লাহ আমাদের রোহিঙ্গাদের ভালো রেখেছেন। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা চিকিৎসাসহ আমরা যাবতীয় সেবা পাচ্ছি।’
অপর এক শরণার্থী সাদেকা বিবি বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমাদের পাহাড়ের বন থেকে কাঠ এনে রান্না করতে হতো। এখন গ্যাসের চুলাই রান্না করি।’
তাজনিমারখোলা মসজিদের পাশের মক্তব ছুটি হলে কথা হয় রোহিঙ্গা শিশু নুর ছেহেনা, রুচিয়া, তছলিমা, নুর আয়েশা, মোহাম্মদ রাসেল ও সায়বার সাথে।
তারা জানায়, মিয়ানমারে তাদের অনেক খেলার সাথী ছিলো। কিন্তু এখন কে কোথায় আছে জানা নেই।
রোহিঙ্গা নারী সেতারা বেগম বলেন, ‘ক্যাম্পের জীবন কষ্টের। রোদ-বৃষ্টিতে, শীতে এবং গরমে অনেক কষ্ট করে আমাদের মানিয়ে নিতে হয়। ছোট ছোট প্রতিটি ঘরে ১০/১২ জনের সংসার। বিভিন্ন সময়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ রোহিঙ্গাদের। বিশেষ করে রোহিঙ্গা নারীদের।’
তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিটি ক্যাম্পে সেবার মান বাড়াতে অনুরোধ করি। আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আরো বেশি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।’
রোহিঙ্গা কিশোরী নুরে জান্নাত বলেন, ‘খুব কম বয়সেই রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ে হয়ে যায়। ছেলে পছন্দ হলেই বাবা-মা বিয়ে দিয়ে দেয়। তাছাড়া রোহিঙ্গা বেকার যুবকেরা বসে থাকার চেয়ে বিয়ে করাকে উত্তম মনে করেন। এখানে কোন কাজ নেই। বসে বসে খাওয়া আর বিয়ে করে সন্তান জন্ম দেওয়া। তাই এখনই ভাবতে হবে রোহিঙ্গাদের জীবন মান উন্নয়নে আরো কী করা যায়?’