জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, দেশের মানুষ যেন নরকের আগুনে জ্বলছে। দুর্নীতি, দুঃশাসন, বৈষম্য আর লুটপাটের কারণে দেশের মানুষ নরকের আগুনে পুড়ছে। মাঝে মাঝে ক্রিকেট ও ফুটবলে বিজয়ের দু-একটা সুখবরে যেন ঠাণ্ডা বাতাসে বইয়ে যায়। যারা বোকার স্বর্গে বাস করেন তারা হয়তো মনে করেন আমরা খুবই ভালো আছি। আসলে দেশের ৯৯ ভাগ মানুষই ভালো নেই। শতকরা ১ ভাগ মানুষ যারা দেশের বাইরে আসা-যাওয়া করেন, তারা বুঝতে পেরে বিদেশকে স্বর্গ ভেবে দেশ থেকে টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছেন।
সোমবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয় মিলনায়তনে গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটির পরিচিতি সভায় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এসব কথা বলেন।
এ সময় জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো দলের বি-টিম নয়। জাতীয় পার্টি কোনো দলের দালালি করে না। জাতীয় পার্টি কারো জোটে নেই। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বেই জোট গঠন হবে। কেউ জাতীয় পার্টির ভেতরে থেকে অন্য দলের দালালি করতে চাইলে তার স্থান জাতীয় পার্টিতে হবে না।
তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে সংবিধান কাটাকাটি করে দেশের গণতন্ত্র ধংস করে দিয়েছে। ১৯৯১ সালের পর থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ১৯৯১ সালের আগে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার নামে এক ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাই জবাবদিহিতা নেই কোথাও।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রতিদিন দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, যেন কারো কিছুই করার নেই। লঞ্চ দুর্ঘটনায় শত শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে; আবার সড়কে প্রতিদিন কত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেই, সামাজিক নিরাপত্তা নেই। নাবালক শিশু কৌতুক করলেও তার সাজা হয় আবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো কর্মকর্তা অবস্থান নিলে তার চাকরি চলে যায়। দেশে দুষ্টের লালন আর শিষ্টের দমন চলছে।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বিএনপি আবারো হাওয়া ভবন সৃষ্টির স্বপ্ন দেখছে। অসুস্থ পল্লীবন্ধুকে জেলখানা থেকে পিজি হাসপাতালে নিতে বারবার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তখন বিএনপি সরকার পল্লীবন্ধুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি। বিএনপি চেয়েছিল পল্লীবন্ধু এরশাদ যেন জেলখানাতেই মারা যান। কিন্তু আল্লাহর বিচার এখন দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগ মনে করছে নৌকা পেলে এমপি, মন্ত্রী ও চেয়ারম্যান হওয়া যায়। তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে স্বপ্ন দেখছে। দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দেশে চাল, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। যে সরকার টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে পারে না, তাদের মুখে উন্নয়নের কথা শোভা পায় না। মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে বাসে চড়তে পারে না। দেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে চায় না। দেশের মানুষকে মুক্তি দিতেই জাতীয় পার্টির রাজনীতি।
গাজীপুর জেলা আহ্বায়ক কমিটির পরিচিতি সভায় সভাপতিত্ব করে গাজীপুর জেলা আহ্বায়ক ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া এবং সঞ্চালনা করেন গাজীপুর জেলা সদস্য সচিব মো. কামরুজ্জামান মণ্ডল।
এ সময় বক্তব্য রাখেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন, ভাইস চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান খান, গাজীপুর নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আল আমিন সরকার, মনিরুজ্জামান খান, রাহেলা পারভীন শিশির, এসএম কিবরিয়া, চিশতী আলমগীর, মাহাবুর রহমান মৃধা, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, রুস্তম শরীফ, মুজিবুর রহমান, আব্দুর রহিম শেখ, আবু জাফর রিপন, কাজী নাসির খান, আব্দুল কাইয়ুম, আব্দুল মান্নান মিলন, মাসুদুর রহমান, মাহবুবুল আলম পাভেল। উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সেলিম উদ্দিন, পার্টির যুগ্ম মহাসচিব মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন খান, দফতর সম্পাদক-২ এমএ রাজ্জাক খান, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ, মো. হুমায়ুন কবীর সিকদার।