নির্বাচন কমিশন গঠনের অংশ হিসাবে বিশিষ্টজনদের পরামর্শ নিতে আজ দুদফা বৈঠকে বসতে যাচ্ছে সার্চ কমিটি। সুপ্রিমকোর্ট জাজেস লাউঞ্জে প্রথম দফায় বৈঠক বসবে বেলা ১১টায়। এতে বিশিষ্ট আইনজীবী, প্রশাসনের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্যে ২১ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
দুপুর পৌনে ১টায় অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিসহ ১৫ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। রোববার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তৃতীয় ও শেষ দফা বৈঠক হবে। এরপর প্রস্তাবিত নাম যাচাই-বাছাইয়ের দিকে মনোযোগ দেবে সার্চ কমিটি।
এদিকে সার্চ কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে প্রায় আড়াইশর মতো প্রস্তাব জমা পড়েছে। শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উপস্থিত হয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা নামের তালিকা জমা দিয়েছেন। এছাড়া ইমেইলের মাধ্যমে দুইশর মতো প্রস্তাব এসেছে, এতে বিদেশে থাকা অনেক বাংলাদেশিও প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন থেকে ৪টি প্রস্তাব জমা পড়েছে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য থেকে ২৪টি প্রস্তাব জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব শফিউল আজিম। শুক্রবার সন্ধ্যায় শফিউল আজিম সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের দায়িত্ব ছিল বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা। আমরা বিকাল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করে কাউন্টার বন্ধ করতে বলেছি।
তিনি বলেন, সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবার পক্ষ থেকেও আন্তরিক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপাতত আমরা বিশিষ্টজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। যেসব প্রস্তাব এসেছে সেগুলোতে কারা কতগুলো নাম দিয়েছেন তা খুলে দেখা হয়নি। বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রস্তাবিত নাম যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করবে সার্চ কমিটি।
এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায় থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনে বর্ণিত যোগ্যতার নিরিখে সর্বোচ্চ ১০ জনের নাম প্রস্তাব করতে সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। নাম প্রস্তাবের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। প্রায় আড়াইশ প্রস্তাবে চার থেকে পাঁচশর মতো নাম থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রথম বৈঠকে আমন্ত্রিত যারা : শনিবার বেলা ১১টায় সার্চ কমিটি বিশিষ্টজনদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। এ বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আব্দুল আজিজ ও আলী ইমাম মজুমদার, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ, ফিদা এম. কামাল, আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মুনসুরুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার রোকনুদ্দিন মাহমুদ, এমকে রহমান, ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান ও ড. আসিফ নজরুল, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজি মাহমুদ আলী, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতা অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ ও ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান।
দ্বিতীয় বৈঠকে আমন্ত্রিত যারা : দুপুর পৌনে ১টায় বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসবে সার্চ কমিটি। এতে আমন্ত্রণ পাওয়া বিশিষ্টজনদের মধ্যে রয়েছেন-ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল হক, ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, জাগরণের সম্পাদক আবেদ খান, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ, জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সম্প্রতি আইন পাশ করেছে জাতীয় সংসদ। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনায় ৫ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ছয় সদস্যের এ কমিটি ইতোমধ্যে দুদফা বৈঠক করেছে।
তারই ধারাবাহিকতায় সার্চ কমিটি আজ বিশিষ্টজনদের সঙ্গে দুদফা বৈঠক করবে। তৃতীয় দফা বৈঠক হবে রোববার। আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির হাতে ১৫ কার্যদিবস সময় আছে। এ হিসাবে ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নাম প্রস্তাবের সময় আছে। তবে এর আগেই সব প্রক্রিয়া শেষ করে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কমিটি সংশ্লিষ্টরা।