গ্রেফতারের আগে যা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে নৃশংস অভিযান চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। অতর্কিত হামলায় নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে হানাদার বাহিনী। এমতাবস্থায় ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

স্বাধীনাতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষবার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।’

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে বলা হয়-ঢাকায় যখন প্রথম গুলি বর্ষিত হলো ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের (ওয়েব লেংনথ) কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হলো আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসাবে ঘোষণা করলেন।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ ডকুমেন্টস থেকে জানা যায়-২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এই-ই হয়তো আপনাদের জন্য আমার শেষ বাণী হতে পারে। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি-যে যেখানেই থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন এবং হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান-যতদিন না দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’

সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়-২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এটি তৎকালীন ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এ ঘোষণা বিশ্বের বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত হয়। তখনই শুরু হয় স্বাধীনতার লড়াই। নয় মাসব্যাপী যুদ্ধ শেষে বাঙালি জাতি কাঙ্ক্ষিত বিজয় ছিনিয়ে আনে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on linkedin
LinkedIn
Share on print
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ