আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘স্পষ্ট করে বলতে চাই আমাদের নেতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান। ’
শুক্রবার (১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বিএনপির স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণীয় অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
এ সময় ৯৮ জন শিশু প্রতিযোগীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট নতুন কোনো কথা নয়, বিএনপির নেতা এখন যিনি জীবিত আছেন তিনি হচ্ছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং তার অসুস্থতার কারণে তার অবর্তমানে আমাদের নেতা তারেক রহমান। আন্দোলনের নেতাও সেভাবে তারেক রহমানই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি দ্বিধা-বিভক্ত নয়। এখন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ( ৩১মার্চ) এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নওগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘বিএনপির নেতারা নানা ভাগে বিভক্ত। বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। তাদের দলে নেই কোনো গঠনতন্ত্রের বালাই। তারা আজ নানাভাবে বিভক্ত। বিএনপির নেতা কে? তাদের আন্দোলনের নেতা কে?’
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য তিনি (ওবায়দুল কাদের) এসব বক্তব্য রাখছেন প্রতিদিন। ক্ষমতাসীনরা স্বাধীনতার ভ্রান্ত ইতিহাস প্রচার করছে। বলা হচ্ছে যে, একজন ব্যক্তি ও একটি দল ছাড়া কেউই এই স্বাধীনতা যুদ্ধে কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না। অথচ সত্য কথা হচ্ছে এই স্বাধীনতার জন্য এ দেশের মানুষ সেই ব্রিটিশ আমল থেকে আন্দোলন, সংগ্রাম করেছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের যে শুরুটা, মুক্তিযুদ্ধের যে সূচনা সেটা যিনি করেছিলেন, যার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল, সেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামসহ একেবারে সবার নাম মুছে দেওয়া হচ্ছে। ’
তিনি বলেন, তারা শেরে বাংলা একেএম ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কথা একবারও উচ্চারণ করে না। এমনকি তাদের দলের যারা নয় মাস সরকার পরিচালনা করলো, যুদ্ধ পরিচালনা করলো তাদের কথা একবারও উচ্চারণ করে না। তারা উচ্চারণ করে না তাজউদ্দিন আহমেদ সাহেবের কথা, এমএজি ওসমানি সাহেবের কথা, সেক্টর কমান্ডার যারা যুদ্ধ করলেন তাদের কথা একবারও তারা উচ্চারণ করে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন তো কথা শুনলে মনে হয়, একজন মাত্র ব্যক্তি এককভাবে এদেশে যুদ্ধ করেছেন, স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেজন্য আমাদেরকে কৃতার্থ হয়ে প্রতিমুহূর্তে সেই বাজনা বাজাতে হবে। এমন একটা অবস্থা তারা তৈরি করেছে।
বিএনপি মহাসচিব নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস পৌঁছানোর তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘এখন আমরা এমন একটা সময় অতিক্রম করছি, যে সময়টা আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ একটা সময়। আমাদের ভাষা আন্দোলন, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এসবের জন্য যে অর্জন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে আনা এসব কিছুকেই এরা ভুলিয়ে দিয়ে এখন একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দিচ্ছে। ’
অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মাহবুব হাসান, জাহাঙ্গীর ফিরোজ, জাকির আবু জাফর, মুস্তাহিদ ফারুকী, নাসিম আহমেদ, শিশুদের মধ্যে মো. আবরার, সামিয়া নুজহাত ও ওয়াজদিয়া উনাইছা।
এসময় ‘শহীদ জিয়ার বাংলাদেশকে জানো’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন বিএনপি মহাসচিব।
স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য আমিরুল ইসলাম কাগজী ও আরিফুর রহমান মোল্লার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সদস্য সচিব আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।