ওসির বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজি মামলা

ফরিদপুরের সালথা থানার ওসি মো. আসিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। রোববার ফরিদপুরের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট ৬নং আমলি আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মুরাদ মোল্লা।

আদালতের বিচারক ফরিদউদ্দিন মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি অভিযোগটি বিভাগীয় তদন্তের জন্য ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) ও ফরিদপুর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন জানান, এ মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৮ এপ্রিল।

মামলা সূত্রে ও ইউপি সদস্য মো. মুরাদ মোল্লা জানান, সালথা থানার ওসি মো. আসিকুজ্জামান ও তার অধীনস্থ এসআই হান্নান ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের সময় বাদীর কাছে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাকে ইউপি নির্বাচনে অংশ নিতে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন এবং ভয়ভীতি দেখান। পরে বাধ্য হয়ে ইউপি সদস্য মো. মুরাদ মোল্লা ৭৫ হাজার টাকা তুলে দেন ওসির হাতে। টাকা দেওয়ার পরেও তার বিপরীত পক্ষের যোগসাজশে আরও ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ার কারণে অসুস্থ থাকার পরও মুরাদ মোল্লার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দেওয়া হয়। এভাবে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে তার কাছ থেকে অর্থ দাবি করতে থাকেন ওসি মো. আসিকুজ্জামান।

অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ১৪ মার্চ রাত ১টার দিকে পূর্ব আক্রোশের জেরে মুরাদ মোল্লার ভাই জিহাদকে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ওসি তার অধীনস্থ কিছু কর্মকর্তা ও কনস্টেবল দিয়ে কোন মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই বাসা থেকে থানায় নিয়ে আসেন। পরদিন সকালে থানায় গিয়ে মুরাদ তার ভাইকে ধরে আনার কারণ জানতে চান ওসির কাছে।

মুরাদ মোল্লা জানান, ওসি অপরাধের কথা না বলে জিহাদকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা চান। টাকা না দিলে জিহাদকে আদালতে চালানের পাশাপাশি মুরাদকে গ্রেফতারের ভয় দেখান। তাৎক্ষণিক মুরাদ থানা থেকে চলে আসেন।

অভিযোগপত্রে মুরাদ বলেন, ওসির দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় ওসির হুকুমে এসআই হান্নান জিহাদকে থানার একটি কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে জখম করে। ১৫ মার্চ জিহাদকে মিথ্যা মামলায় আসামি করে আদালতে পাঠানো হয়। ওই মামলায় জিহাদ ২৩ মার্চ জামিনে মুক্তি পান। থানায় পিটিয়ে জখম করায় জিহাদকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় চিকিৎসার জন্য।

এসব বিষয় নিয়ে ওসির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা হলে ক্ষিপ্ত হন ওসি মো. আসিকুজ্জামান।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য মুরাদ মোল্লা বলেন, আমি পঙ্গু মানুষ। আমাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে ওসি হয়রানি করছে। আমি ওসির বিচারের দাবি জানাই। আমি ওসির এসব অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি।

এদিকে সালথা থানার ওসি মো. আসিকুজ্জামান রোববার বিকালে থানায় সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা হলো- গত  ১৩ মার্চ দলপক্ষ নিয়ে সালথা থানা এলাকার গট্টি ইউনিয়নের বাসুয়ারকান্দী গ্রামে ধলামিয়ার দল ও ইকবাল শেখের দলের মধ্যে মারামারি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।

ওসি বলেন, সংঘর্ষের পরিস্থিতি শান্ত হলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে। এ ঘটনার জেরে গট্টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে। ওই রাত ২টার দিকে পুনরায় খবর আসে বালিয়াবাজার এলাকায় দুইটি দলের লোকজন অস্ত্র নিয়ে সংগঠিত হচ্ছে। এমন খবরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাতেই পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দলবদ্ধ লোকজনকে ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেই। উপস্থিত দুইপক্ষের লোকজন পুলিশি নির্দেশ অমান্য করে পুলিশের ওপর বেপরোয়াভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের আক্রমণে আমিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হই। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ঘটনায় জড়িত আক্কাছ শেখ, মজনু ফকির, জিহাদ মোল্যা ও সজিব মিয়াকে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরাসহ গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, ওই রাতেই মুরাদ মেম্বার ও গট্টি ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাবলু থানায় আসেন মুরাদের ভাই জিহাদকে ছাড়াতে। আমি তাকে ছাড়তে নারাজ হই। এতেই মুরাদ মেম্বার আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। জিহাদকে গ্রেফতার করে থানা গারদে রাখা হয়। তাকে কোনো মারধর করা হয়নি। পরের দিন তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on linkedin
LinkedIn
Share on print
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ